নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুরে ২ সেপ্টেম্বর নারীকে ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বিবস্ত্র করে মারধরের ছবি ভাইরালের ঘটনার অন্যতম হোতা দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার। তার বাহিনীতে ৫০ থেকে ৬০ জন ক্যাডার রয়েছে। এলাকায় সে যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। মূলত একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগ নেতাদের নজরে আসে দেলোয়ার।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে ছ্যাঁচড়া চোর থেকে দেলোয়ার কিশোর গ্যাং ‘মামা বাহিনী’ গড়ে তোলে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নে তার বাহিনী বিস্তৃত। এ বাহিনীতে ক্যাডার সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ জন।
এক সময়কার ছিঁচকে চোর দেলোয়ার এখন যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা। হত্যা, রাহাজানি, চাঁদাবাজিসহ পাঁচ মামলার আসামি দেলোয়ার হোসেন। দেল্যা চোরা পুলিশের খাতায় দীর্ঘদিন ধরে পলাতক।
বাহিনীর ক্যাডাররা চুরি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, সিএনজি অটোরিকশা ছিনতাই, নারী নির্যাতন ও ইভটিজিংয়ের সঙ্গে জড়িত। অনেকের প্রয়োজনে থানার গোলঘরে সালিশদার হিসেবেও গেছে দেলোয়ার।
বেগমগঞ্জ থানার দু-একজন সাব-ইন্সপেক্টর ও সহকারী সাব-ইন্সপেক্টরের সঙ্গেও তার সখ্য ছিল। অথচ পুলিশ বলছে তাকে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে এলাকাবাসী বলছেন দেলোয়ার গ্রামেই ছিল। এলাকাবাসী জানান, দেলোয়ারের দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই। চুরি-চামারি-ছিনতাই, অস্ত্রবাজি করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সে অর্থ আদায় করত। একে মেরে, ওকে হুমকি দিয়ে ও চাঁদাবাজি করে তার দিন কাটত। অস্ত্র বিক্রি ও অস্ত্র ভাড়া দিয়ে সে অর্থ কামাই করত। এলাকাবাসী জানান, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর কবিরের পক্ষে একটি ভোটকেন্দ্র দখল করে দেলোয়ার আওয়ামী লীগ নেতাদের নজরে আসে। যদিও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিপুল ভোটে হেরে যান। এর পর দেলোয়ার এলাকার যুবলীগ নেতায় পরিচিত হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরণের পক্ষে নির্বাচন করে। নির্বাচনের পর বিশাল মোটরসাইকেল মিছিল করে কিরণকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে দেলোয়ার আওয়ামী লীগের নেতা বনে যায়। এমপি কিরণকে ফুলের তোড়া দেয়া ছবি দিয়ে দেলোয়ার পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার তৈরি করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, এমনকি উপজেলা ও জেলা সদরেও টাঙিয়ে দেয়।
দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ও তার প্রধান সহযোগী বাদলকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র্যা ব। এই দেলোয়ারই ওই নারীকে এর আগে দুবার ধর্ষণ করে।
বেগমগঞ্জ উপজেলার ছায়েদুল হকের তিন ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় দেলোয়ার। দেলোয়ারের বড়ভাই আনোয়ার হোসেন ও ছোটভাই মিন্টু ইয়াবা ব্যবসা, গরু চুরি, সিঁদেল চুরি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। রোববার র্যাোবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে দেলোয়ার। বেগমগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ চাঁদাবাজি, রাহাজানি, বিস্ফোরক আইনে চারটি মামলা রয়েছে। নতুন করে তার বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অস্ত্র আইনে একটি, বেগমগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (ধর্ষণ) একটি মামলা হয়েছে।
বেগমগঞ্জ এলাকার একটি মসজিদের পেশ ইমাম (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, দেলোয়ার ছোটবেলায় বাড়ি-বাড়ি চুরি করত। পুকুরের মাছ চুরি করত। ৭-৮ বছর আগে সিএনজি চালাতে শুরু করলেও দেলোয়ারের সঙ্গে বেগমগঞ্জের হাজীপুরের সুমন বাহিনী ও জিরতলীর ফাজিলপুরের নিজাম বাহিনীর সখ্য হয়। এর পর সিএনজি চালানো ছেড়ে দিয়ে দেলোয়ার কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান এনে বিক্রি শুরু করে। এর সঙ্গে সে অস্ত্র বেচাকেনা ও অস্ত্র ভাড়া দেয়াও শুরু করে।
এ বিষয়ে একলাসপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন জানান, দেলোয়ার বা তার বাহিনীর কেউ আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। তবে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার প্রশ্রয়ে তারা অস্ত্রবাজি করে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলন করে বেগমগঞ্জ আসনের এমপি মামুনুর রসিদ কিরণ জানিয়েছেন, দেলোয়ারকে তিনি চেনেন না। নির্বাচনে জয়লাভের পর কোন ফাঁকে তাকে ফুল দিয়েছিল তা তার জানা নেই। দেলোয়ার, সুমন ও নিজাম বাহিনীসহ সব ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতারের দাবি জানান এমপি কিরণ।
উৎসঃ যুগান্তর