তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: উজানে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদের পানি আবার বাড়ছে। সুনামগঞ্জেও বাড়ছে সুরমা নদীর পানি। অবশ্য এখনো পানি বিপত্সীমার নিচে। সিলেটে বেভির ভাগ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে। সোমবার রাত থেকে বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়। নতুন করে বন্যার আশঙ্কায় দুর্গতরা।
কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট ছাড়া সিলেটসহ বেশির ভাগ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। চলছে মানুষের দুর্ভোগ। রাস্তাঘাট ভেঙে বেহাল। বাড়িঘরে ফিরে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে মানুষ। এখনো পানিতে তলিয়ে থাকা এলাকায় যাতায়াতের কষ্টে রয়েছে মানুষ। সেই সঙ্গে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ।
কোম্পানীগঞ্জে গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে সারা দিনে বিভিন্ন এলাকায় দেড় ফুটের মতো পানি বাড়ার খবর মিলেছে। গোয়াইনঘাট উপজেলায়ও পানি কিছুটা বেড়েছে। তবে বাকি উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কিছু উপজেলায় পানি কিছুটা কমেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া অমলসিদে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপত্সীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, শেওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপত্সীমার ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপত্সীমার ১০৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সোমবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত হওয়ায় গতকাল সকাল থেকেই বন্যার পানি বাড়তে থাকে। উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের লম্বাকান্দি গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে সকাল থেকে পানি বাড়ছিল। বিকেল পর্যন্ত দেড় ফুটের মতো পানি বেড়েছে। ’ লাছুখালী গ্রামের আমেনা খাতুন বলেন, ‘বাড়ি ছাড়ার ১১ দিন পর বাড়ি ফিরে শান্তি নাই। ঘরদোর এই দুই দিনে ঠিকঠাক করেছি। আবার পানি বাড়ছে। আবার ঘরে ঢোকে কি না কে জানে। ’
মৌলভীবাজার সদর ছাড়াও কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা ও রাজনগর উপজেলায় দুর্গত মানুষ ব্যাপক ভোগান্তি পোহাচ্ছে। গতকাল সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়, জেলায় এ পর্যন্ত পানিবাহিত রোগসহ নানা রোগে ৮৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাকালুকি হাওরসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি এবং কিছু এলাকার নিম্নাঞ্চলের পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বেশ কিছু এলাকায় এখনো বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। ঘরবাড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। পানিতে ডুবে থাকায় বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্রেরও একই অবস্থা। দূর-দূরান্ত থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করে পান করছে তারা। পানি মাড়িয়ে যাওয়া-আসা করায় নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, আমাশয়, চর্মরোগ, পেট ব্যথা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গাদাগাদি করে থাকায় চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দীন মোর্শেদ জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় ৭৪টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, মৌলভীবাজারে ৫৮ হাজার ৬৯১টি পরিবারের দুই লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ সদস্য ক্ষতির মুখে। ১৪ হাজার ২০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে ৮৮ হাজার।
ইউনিয়নের বেশ কিছু নিম্নাঞ্চলে এখনো পানি রয়েছে। দুর্গত মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।