খোলা স্থানে নামাজ আদায় নিয়ে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁওয়ে স্থানীয় মুসলিম এবং উগ্র ডানপন্থি গ্রুপগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কয়েক মাস ধরে সেখানে এমন উত্তেজনা দেখা দিলেও শুক্রবার মুসলিমরা যখন শহরটির উদ্যোগ বিহারে নামাজ আদায় করতে যান, তখন তাতে বাধা দেয় জাফরান রঙধারী স্থানীয় গ্রুপ। এ সময় তারা মুসলিমদের হয়রান করেন। তাদেরকে ‘ভারত মাতা কি জয়’ শ্লোগান দিতে বলেন। ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআইকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।
এতে বলা হয়, শুক্রবার মুসলিমরা খোলা স্থানে জুমার নামাজ আদায় করতে গেলে তাতে বাধা দেয় উগ্র ডানপন্থিরা। এ সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। উত্তেজিত জাফরান রঙের শাল গায়ে কাউকে কাউকে মুসলিমদের হয়রান করতে দেখা যায়। ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে দেখা যায়, উভয় গ্রুপ একে অন্যের বিরুদ্ধে জোরালো ভাষায় কথা বলছে।
এ সময় জাফরান রঙের শাল পরা এক ব্যক্তি, অন্যজন মেরুন রঙের শার্ট ও মাথায় উলের টুপি পরা এবং অন্যজন নীল শার্ট পরা- এরা সবাই মুসলিমদেরকে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দিতে বলছেন। তাদের একজনকে ওই স্লোগান দেয়ার দাবি তুলে বলতে শোনা যায়, আমরা আপনাদেরকে বাধ্য করবো, আমরা আপনাদেরকে দিয়ে বলাবো, আপনাদের বলতেই হবে। মেরুন শার্ট পরা ব্যক্তিতে ক্রোধের সঙ্গে বলতে শোনা যায়, আপনারা কেন এটা বলতে পারবেন না। আপনারা কি পাকিস্তানে বাস করেন?
এসব প্রশ্নের জবাবে মুসলিমদের বলতে শোনা যায়- আমরা নামাজ পড়তে চাই। আপনারা কেন এসব করছেন? কিন্তু মুসলিমদের এসব বাক্য উত্তেজিত জনতার মধ্যে হারিয়ে যায়।
তখন জাফরান শাল পরা ব্যক্তিকে মুসলিমদের দিকে আঙ্গুল তুলে বলতে শোনা যায়, তোমরা যদি ভারতে থাকতে চাও তাহলে তোমারকে বলতেই হবে (ভারত মাতা কি জয়)। জবাবে মুসলিমদের কয়েকজন জড়ো হন নামাজের জন্য এবং স্লোগান দেয়া শুরু করেন- মহাত্মা গান্ধী কি জয়।
ভিড়ের ভিতর থেকে মেরুন শার্ট পরা ওই ব্যক্তিকে আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায় ধাক্কাধাক্কি করছেন এবং চিৎকার করে বলছেন, এখানে আমরা নামাজ পড়তে দিতে পারি না। বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের তথ্যমতে, দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশ এবং তারা আলোচনার চেষ্টা করে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন বা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি।
এর আগে মুসলিমরা যেখানে নামাজ আদায় করেন সেখানে গোবর ছড়িয়ে দিয়ে বাধা দেয়া হয়। পিটিআই বলেছে, এদিন গুরগাঁওয়ের অন্যান্য স্থানে নামাজ হয়েছে। নামাজ আদায়ের জন্য প্রশাসন থেকে এসব স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল ২০১৮ সালে।
তবে নামাজ আদায় নিয়ে সর্বশেষ উত্তেজনার বিষয় পৌঁছেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। রাজ্যসভার সাবেক একজন এমপি রাজ্যের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করার পর এ বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে গেছে। ওই আবেদনে হরিয়ানা পুলিশের ডিজিপিসহ অন্য কর্মকর্তারা কেন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা কমাতে ব্যর্থ হয়েছেন তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
প্রতি সপ্তাহেই সেখানে এমন উত্তেজনা দেখা দেয়। ফলে আইন শৃংখলা রক্ষায় প্রয়োজন হয় পুলিশ উপস্থিতি। কিন্তু তারা উগ্র ডানপন্থিদের কখনোই বিরত রাখতে সক্ষম হয়নি। গত মাসে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী এমএল খাত্তার বলেছেন, শহরের উন্মুক্ত স্থানগুলোতে মুসলিমদের নামাজ আদায় করতে দেয়া হবে না।