আপন ভাতিজিকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল তাকে। তবে সোহেল নামের এই ধর্ষককে কারাগারে আটকে রাখা গেছে মাত্র এক মাস। এরপর জামিনে বের হয়ে এসে গলায় ফুলের মালা পরে মোটরসাইকেল শোডাউন ও আনন্দ উল্লাস করে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করেছে সে। তার মোটরসাইকেল শোডাউন ও উল্লাসের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফেসবুক জুড়ে বইছে সমালোচনা ঝড়।
ধর্ষক সোহেল নাঙ্গলকোট উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের হেসিয়ারা পূর্বপাড়ার বাসিন্দা। জামিন নিয়ে এসে ধর্ষক সোহেল শুক্রবার (১৭ জুলাই) গলায় ফুলের মালা পড়ে এলাকায় মোটরসাইকেলে চেপে শোডাউন ও উল্লাস করে।
এদিকে আসামি গ্রেফতারের পর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী সন্তান প্রসব করে। এর আগে গত ১৪ জুন ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় আপন ভাই সোহেলের বিরুদ্ধে নাঙ্গলকোট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এর পরদিন (১৫ জুন) ভাতিজিকে ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষক সোহেলকে গ্রেফতার করে।
কিশোরীর বাবা ভারাক্রান্ত কণ্ঠে জানান, গত বছরের নভেম্বর মাসে তার স্ত্রীর ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য কুমিল্লার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে যান। চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ওই ক্লিনিকে ৫/৬দিন অবস্থান করেন। এ সুযোগে বাড়িতে কেউ না থাকায় তার ভাই সোহেল তার কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ করে। টানা চারদিন এ ঘটনা ঘটানোর পর বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য তার মেয়েকে হুমকি দেয়। ভয়ে তার কিশোরী মেয়ে কাউকে বিষয়টি জানায়নি। এরই মধ্যে তার স্ত্রী অসুস্থতা নিয়ে মারা যান। এদিকে তার কিশোরী মেয়ে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়ে সালিশ বসলে কিশোরী ওই ঘটনার জন্য চাচা সোহেলকে দায়ী করে। এ ঘটনায় ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন তিনি। তবে গ্রেফতার হলেও আটকে রাখা গেলো না তাকে।
জানা গেছে, গত জুন মাসের শেষ দিকে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে ওই কিশোরীর একটি বাচ্চা জন্ম হয়। পরবর্তীতে থানার ওসির মাধ্যমে বাচ্চাটিকে দত্তক দেয়া হয়।
এদিকে গত মঙ্গলবার ধর্ষক সোহেল কারাগার থেকে বের হয়ে শুক্রবার এলাকায় মোটরসাইকেল শোডাউন করে। এতে তার ওই ভুক্তভোগী পরিবারের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হয়।
হেসিয়ারা এলাকার স্থানীয় মেম্বার মঞ্জল হক জানান, ধর্ষণের মামলায় জামিন নিয়ে এসে সোহেল মোটরসাইকেল শোডাউন ও উল্লাস করে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করেছে। উল্লাসের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করছে।
বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাহাজান জানান, সোহেল আপন ভাতিজিকে ধর্ষণ করেছে। ভুক্তভোগি কিশোরী তাকে ধর্ষক হিসেবে দাবি করছে। প্রকাশ না করার জন্য ওই কিশোরীকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে। পরে আমরা বসে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছি। এখন আবার শুনেছি সে এলাকায় এসে মোটরসাইকেল শোডাউন ও উল্লাস করছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সোহেলের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও সে ফোন ধরেনি।
নাঙ্গলকোট থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবার মামলায় ধর্ষক চাচা সোহেলকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে জামিন নিয়ে আসার বিষয়টি আদালত জানে। মোটরসাইকেল শোডাউন এবং উল্লাসের বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছি। এর আগে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা এবং সন্তান প্রসবের পর মা ও শিশুর ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা পাঠানো হয় ঢাকায়। সেই টেস্টগুলোর রিপোর্ট এখনও ঢাকা থেকে আসেনি। আসলে সেই রিপোর্ট নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।