ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা কীভাবে চলাফেরা করবেন—নবীন শিক্ষার্থীদের আচরণ সংক্রান্ত এমন ১৪টি নির্দেশনা প্রকাশ করেছে হল শাখা ছাত্রলীগ। নির্দেশনার নিচে ‘‘আদেশক্রমে মুক্তিযোদ্ধা হল ছাত্রলীগ (২য় বর্ষ)’’ লেখা সংবলিত বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এটা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
হল ছাত্রলীগের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা জিয়া হলে থাকতে হলে ১৪টি নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। ১৪টি নির্দেশনা হলো:
১. হলের ভেতরে ও বাইরে ফার্স্ট ইয়ার ব্যতীত সকল বড় ভাইদের সালাম দিতে হবে। সালাম দেওয়ার সময় ডান হাত দিয়ে হ্যান্ডশেক করতে হবে, হ্যান্ডশেক করার সময় বাম হাত পেছনে রাখতে হবে। হাতে ঝাকি বা চাপ দেওয়া যাবে না। হাত বুকে রাখা যাবে না।
২. মসজিদ, টিভি রুম, রিডিং রুম, বাথ-রুম, ক্যানটিন, ওয়াইফাই জোন, মেস এবং সেলুনে সালাম দেওয়া যাবে না।
৩. একসাথে অনেক বড় ভাই থাকলে চেইন অব কমান্ড অনুযায়ী সালাম দিতে হবে।
৪. প্রত্যেক বড় ভাই এবং ইয়ারমেটের ফোন নাম্বার রাখতে হবে।
৫. ছাত্রলীগের সকল প্রোগ্রামে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে হবে। সমস্যা থাকলে ইমিডিয়েট বড় ভাইদের বলতে হবে।
৬. গেস্টরুমে লুঙ্গি, টাউজার, টি-শার্ট ও মোবাইল প্যান্ট পড়ে আসা যাবে না।
৭. ক্যান্টিনের প্রথম চারটি টেবিলে বসা যাবে না এবং ক্যান্টিন বয়দের সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না।
আরও পড়ুন: ঢাবির হল চলে ছাত্রলীগের ‘সংবিধানে’
৮. টিভি রুমের প্রথম সারির চেয়ারগুলোতে বসা যাবে না ও রিমোট হাতে নেওয়া যাবে না।
৯. চেইন অব কমান্ড মানতে হবে। বড় ভাইদের অনুমতি ব্যতীত কোনো রুমে যাওয়া যাবে না।
১০. বড় রিডিং রুম ব্যবহার করতে হবে, কোনো ভাবেই হল সংসদের রুমে প্রবেশ করা যাবে না।
১১. হলে সিগারেট খাওয়া যাবে না, রুমে খাওয়ার পরিবেশ থাকলে খাওয়া যাবে।
১২. হলে ছাত্রলীগ ব্যতীত অন্য কোনো সংগঠন যেমন: ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং বাম সংগঠন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
১৩. ছাত্রলীগ ব্যতীত অন্য কোনো সংগঠনের সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
১৪. সর্বোপরি হলের যেকোনো ব্যাপারে ইমিডিয়েট বড় ভাইদের সিন্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা রকম ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুক্তিযোদ্ধা জিয়া হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, এগুলো সাধারণত সব হলেই হয়ে থাকে। আগে সেটা যদি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ হতো না, তখন এসব গোপনেই থাকতো।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ক্লাস আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব নবীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসলে হলেও যুক্ত হবেন। তাদের উদ্দেশ্য করে এমন নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে। যদিও প্রশাসন ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন এ ধরনের নির্দেশনা দেয়ার এখতিয়ার রাখেন না।
ভাইরাল বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগের নাম উল্লেক থাকলেও এমন নির্দেশনার বিষয়ে অস্বীকার করেছে হল শাখা ছাত্রলীগ। মুক্তিযোদ্ধা জিয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম মামুন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি এ বিষয়ে এখনো অবগত নই। এ বিষয়ে জানতে আমাকে এখন পর্যন্ত একাধিক জন ফোন করেছেন।
হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল হোসেন শান্ত জানান, বিজ্ঞপ্তিটা সম্পূর্ণ বনোয়াট। আমি যতদূর জানি, এরকম কোনো নির্দেশনা কাউকে দেওয়া হয়নি। গত ২ দিন আগে আমাদের হলে একটা ঘটনা ঘটেছে। তখন আমাদের হলের প্রাধ্যক্ষ সেই শিক্ষার্থীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। সেখানেও ছাত্রলীগের কোনো ইনভলভমেন্ট ছিল না। এখন ছাত্রলীগকে কলুষিত করার জন্য একটা মহল এরকম চেষ্টা করতেছে।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. বিল্লাল হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমি ফেসবুকে নেই। এটা কারা-কীভাবে করলো সেটা আমি জানি না। তাই এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারবো না। আমি ফেসবুকে কোন আইডিও নেই। ফেসবুকে কী আছে, না আছে সেটা আমার দেখার সুযোগ নেই।