তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: ডেইলি স্টারের অব্যাহতিপ্রাপ্ত নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় কর্মরত শিশু প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সুষ্ঠু,নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং ন্যায়বিচার দাবি করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ।
সচেতন নাগরিক সমাজ’র প্রতিনিধিরা মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা-বাগান সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সুষ্ঠু তদন্ত ও পাঁচ দফা দাবি জানান।
মঙ্গলবার (১৪ই মে) বিকেলে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনে লিখিত বক্তব্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারহা তানজীম তিথিল এসব দাবি তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে ফারহা তানজীম তিথিল বলেন, “এ বছরের ৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুরে সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় আদিবাসী এই শিশুটির অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। সে বিষয়ে সরেজমিন পর্যবেক্ষণের জন্য সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষে ১২ জনের একটি প্রতিনিধিদল সোমবার এবং মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মিরতিংগা ও মুরইছড়া চা বাগান পরিদর্শন।
সেখানে আশফাকুল হকের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করা শিশুশ্রমিক খুশি উরাং ও দুর্গামনি বাউরির সঙ্গে কথা বলি। মৃত শিশুশ্রমিক প্রীতি উরাং এর মা-বাবা এবং অন্য শিশুদের পরিবারবর্গের সঙ্গেও কথা হয়।
এছাড়া মৌলভীবাজারে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে আমাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছি। বিষয়গুলি দেশবাসীকে জানাতে আজকের এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন।
তিনি আরও বলেন, সৈয়দ আশফাকুল হকের মোহাম্মদপুরের ওই ফ্ল্যাট থেকে ছয় মাসের ব্যবধানে দুটি শিশু অস্বাভাবিক ভাবে পড়ে যায়। পরপর ঘটে যাওয়া একই কায়দায় দুটি ঘটনা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে।
এই বিষয়ে প্রীতির মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে আমাদের মনে হয়েছে, অভাব অনটনে এবং ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছে।
এছাড়া মৃত্যুর সময়েও প্রীতির বয়সন্ধিকালের মাসিক ঋতু স্রাব শুরু হয়নি, ফলে তার বয়স ১৫ বছর হবার কোনো কারণ নেই। এজাহারে বেশি বয়স উল্লেখ করা হয়েছে।
এখানে দুর্গামনির বক্তব্যেও এটা স্পষ্ট হয়েছে, যে তারা নিয়মিত শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতো।
আমাদের দাবিগুলো হলো– ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের কাজের পারিশ্রমিক, চিকিৎসা খরচ এবং পড়াশোনার খরচের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রীতির এবং অন্য শিশুদের ওপরে ঘটে যাওয়া ঘটনার সুষ্ঠু,প্রভাবমুক্ত ও দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে।
প্রীতির এবং দুর্গামনির পরিবারকে যথোপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। সেইসাথে তার পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শিশুশ্রম বিষয়ক নীতিমালাকে আইনে পরিণত করার জোর দাবি করছি। শ্রম আইন নিয়োগের ক্ষেত্রে শিশুর বয়স ১৪ বছরের পরিবর্তে ১৮বছর করার সরকারের কাছে দাবি করছি। সেই সাথে গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালায় গৃহে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিশুর বয়স ১৪ বছরের পরিবর্তে ১৮ বছর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
২০১৭ সালে আদালেতের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রম মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষায় সারাদেশে মনিটরিং সেল গঠনের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল তা অবিলম্বে কার্যকরের জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে গৃহ শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় প্রতিটি বাড়ি পরিদর্শনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, এএলআরডি’র ব্যবস্থাপক রফিক আহমেদ সিরাজী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারহা তানজীম তিথিল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সভাপতি কমরেড আবুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ঈশানী চক্রবর্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান, অনুবাদক ও গবেষক মুহাম্মদ হাবীব, প্রতিদিনের বাংলাদেশ সাংবাদিক বহ্নি ফারহানা, দৃক-এর গবেষক সামিয়া রহমান প্রিমা, কাপেং ফাউন্ডেশন এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার উজ্জ্বল আজিম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক কমরেড তাপস, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিংহ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির সদস্য কমরেড দেওয়ান মাসুকুর রহমান, বাসদ নেতা এডভোকেট হাসান প্রমূখ।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারহা তানজীম তিথিল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সভাপতি কমরেড আবুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান প্রমূখ।