মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নিজের একটি কিডনি দিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী বড় ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এক ছোটভাই।
ছোটভাই ছয়ফুল হোসেনের (২৮) দেওয়া কিডনি পেয়ে নতুন জীবন পেয়েছেন বড়ভাই বদরুল হোসেন (৩৩)। শুক্রবার ঢাকার শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ছয়ফুল হোসেনের দেওয়া কিডনি বদরুল হোসেনের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। তারা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর (কাঁঠালতলী) ইউপির দক্ষিণ মুছেগুল গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে।
জানা গেছে, বদরুল হোসেন প্রায় ৮ বছর ধরে সংযুক্ত আরব-আমিরাতে ছিলেন। সেখানে তিনি একটি দোকানে সেলসম্যানের কাজ করতেন। ২০১৯ সালে ৩০ ডিসেম্বর হঠাৎ বদরুলের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান তার দুটি কিডনি একেবারেই নষ্ট। এরপর ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি বদরুল দেশে ফেরে আসেন।
দেশে ফিরে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকার শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে তার কিডনি ডায়ালাইসিস শুরু করেন। এতেও বদরুলের অবস্থার উন্নতি হয়নি। এ সময় চিকিৎসকরা তাকে জানান বাঁচতে হলে অন্তত একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন পড়বে ২৫ লাখ টাকা।
এরই মধ্যে বদরুলের চিকিৎসার পেছনে যাবতীয় সহায়-সম্বল ব্যয় করে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পড়ে তার পরিবার। এ অবস্থায় বদরুল ও তার পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। কারণ একদিকে ২৫ লাখ টাকা অন্যদিকে একটি কিডনি কে দেবে বদরুলকে! এ অবস্থায় নিজের জীবনের কথা না ভেবে বড় ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসেন বদরুলের ছোটভাই ছয়ফুল হোসেন। তিনি নিজের একটি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে বদরুলের চিকিৎসায় পাশে দাঁড়ায় শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঁঠালতলী। তারা তার চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠন করে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে। পাশাপাশি চলে ফেসবুকে প্রচারণা। হাত বাড়িয়ে দেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি-সংগঠন। ফলে অল্প দিনেই চিকিৎসার জন্য প্রায় ৩৫ লাখ টাকা সংগ্রহ হয়।
গত বছরের জুলাইয়ে বদরুলের দেহে কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা থাকলেও শরীরে প্রাণঘাতী হেপাটাইটিস-সি ও যক্ষ্মা বাসা বাঁধায় তা আর হয়ে উঠেনি। এদিকে প্রায় ১৪ মাস পর সুস্থ হয়ে ওঠেন বদরুল। এরপর শুক্রবার ঢাকার শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ছয়ফুল হোসেনের দেওয়া কিডনি বদরুল হোসেনের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়।
বদরুল ও ছয়ফুলের বড়ভাই স্কুলশিক্ষক মিলাদ হোসেন জানান, আমার ছোটভাই ছয়ফুলের দেওয়া কিডনি বদরুলের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। তারা দুজনেই সুস্থ রয়েছেন। তিনি বদরুলের পাশে দাঁড়ানোর জন্য শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঁঠালতলীর পাশাপাশি সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঁঠালতলীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছয়ফুল হক জানান, বদরুলের চিকিৎসার জন্য প্রথমে ২৫ লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল। আমরা তার চিকিৎসার্থে তহবিল গঠন করে টাকা সংগ্রহ করি। দেড় মাসে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা জমা হয়। বদরুল কয়েক মাস অসুস্থ থাকায় কিডনি প্রতিস্থাপনে দেরি হয়েছে। তার চিকিৎসায় প্রায় ২৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আর তার ছোটভাই ছয়ফুল তাকে একটি কিডনি দিয়েছেন। ছয়ফুল তার ভাই বদরুলকে কিডনি দিয়ে ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বর্তমান সমাজে তা বিরল।