সাভারে আহসান হাবিবকে তারই ব্যবসায়িক অংশীদার নূরুন নবী রনি আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। মূলত ব্যবসার ২০ লাখ টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্যই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে রনি। এ ঘটনায় রনিসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মঙ্গলবার (৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন— প্রধান আসামি নুরুন নবী ওরফে রনি, মো. হাসান আহমেদ,জাহিদ হোসেন ও রঞ্জু।
সিআইডি জানায়, গত ৮ মে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে অজ্ঞাত পরিচয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ব্যবসায়ী আহসান হাবিব। এর আগে গত ৭ মে তাকে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার হরিনহাটি এলাকার একটি বাড়ি থেকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় পাওনা টাকা আদায়ের কথা বলে সাভারের বাসা থেকে বের হন আহসান হাবিব। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরে ঘটনা তদন্তে নেমে নুরুন নবী ওরফে রনিকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। হাবিবের পাওনা ২০ লাখ টাকা পরিশোধ না করতে পেরে তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন রনি।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ‘সাভার থেকে নিখোঁজ হওয়ার চার দিন পর আহসান হাবিব নামে এক ব্যবসায়ীর মরদেহ শনাক্ত করে তার পরিবার। নিহত ব্যক্তি গত ৭ মে কালিয়াকৈর থানার হরিনহাটি এলাকার একটি বাসার নিচ তলায় আগুনে দগ্ধ হন। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয়দের সহায়তায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে পুলিশ। পরের দিন ৮ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান আহসান হাবিব।’
তিনি জানান, অনেক খোঁজাখুঁজির পর আহসান হাবিবের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। এ ঘটনায় তার শ্যালক জাকারিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং জড়িত আসামির অবস্থান শনাক্ত করে। সোমবার (৭ জুন) রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকা থেকে মামলার এক নম্বর আসামি মো. নুরুন নবী ওরফে রনিকে গ্রেফতার করা হয়।
বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর জানান, নুরুন নবীর সঙ্গে নিহত ব্যবসায়ী আহসান হাবিবের ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। রনির কাছে হাবিব ২০ লাখ টাকা পেতেন। সেই বিরোধের জের ধরে রনি আরও তিন জন সহযোগীকে নিয়ে ব্যবসায়ী আহসান হাবিবকে প্রথমে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে, তারপর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ‘যে বাসায় ব্যবসায়ী হাবিবের শরীরে আগুন দেওয়া হয়, সেই বাসাটি ভুয়া পরিচয় দিয়ে ভাড়া নেন আসামি রনি। পহেলা জুন এ বাসায় তার দুজন কর্মচারী থাকবে বলে বাড়ির মালিককে জানান রনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার পর রুমটি তালাবদ্ধ ছিল। রনি কোনও এক সময়ে এই ব্যবসায়ীকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করেন এবং তাকে হত্যার পর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আবারও ঘরে তালা মেরে পালিয়ে যান।’
এই ঘটনায় অভিযুক্ত সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিদের আজ গাজীপুর জেলা আদালতে তোলা হবে বলেও জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।