সুপার এইটে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ডিএলএস মেথডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে নাজমুল শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়ের জোড়া চল্লিশার্ধো রানের ওপর ভর করে ১৪০ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়ায় বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে শুরু থেকেই দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলেন অজি দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রেভিস হেড। হেড ফিরে গেলেও ঠিকই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ওয়ার্নার। ১১.২ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেটে ১০০ রান তুলতে বৃষ্টিতে আর খেলা হয়নি। বৃষ্টি আইনে তাই সহজেই জিতে পুরো পয়েন্ট তুলে নেয় মিচেল মার্শের দল।
শুক্রবার (২১ জুন) অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মিচেল মার্শ। ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলেই তানজিদ হাসান তামিমের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মিচেল স্টার্কের সোজা বল সামান্য নিচু হয়েছিলো, ডিফেন্স করতে গিয়ে সামলাতে পারেননি জুনিয়র তামিম। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শূন্য রানে আউট হন বাঁহাতি এই ব্যাটার।
ক্রিজে এসেই মিচেল স্টার্ককে চার মেরে শুরু করেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল শান্ত। আরেক প্রান্তে লিটন তখন খোলসবন্দি। জশ হ্যাজেলউডকে প্রথম ওভার দেন মেডেন। ১০ বলে গিয়ে করেন ১ রান। এরপর কিছুটা ডানা মেলে মিচেল স্টার্কের বলে বের করেন দুই বাউন্ডারি।
শান্ত ছিলেন সাবলীল, রানের খোঁজে থেকে গতি বাড়ান নিয়মিত। অ্যাডাম জাম্পাকেও সুযোগ পেয়ে মারেন চার। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৩৯ তুলে বাংলাদেশ। লিটন পাওয়ারপ্লের পরও ভুগতে থাকেন। একের পর এক ডটের চাপ তাকে ও দলকে দেয় অস্বস্তি। সেই অস্বস্তি দূর করতে অ্যাডাম জাম্পাকে স্লগ সুইপ মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ডানহাতি ব্যাটার। ২৫ বলে ১৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন লিটন।
৪ নম্বরে ব্যাট করতে আসেন রিশাদ হোসেন। কিন্তু উইকেটে এসে থিতু হতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। দুই রান যোগ করতে পারা রিশাদকে ফেরান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। জোড়া উইকেট হারানোর মাঝে টিকে যাওয়া শান্ত এগিয়ে নিচ্ছিলেন বাংলাদেশকে।
১৩তম ওভারে অধিনায়কের প্রতিরোধ ভেঙে অজিদের স্বস্তি ফেরান জাম্পা। তার স্ট্যাম্প লাইনের ডেলিভারি সুইপ খেলার চেষ্টায় ব্যাটে লাগাতে ব্যর্থ হন শান্ত। বক প্যাডে লাগতেই জোরালো আবেদন তোলে অস্ট্রেলিয়া, তাতে সাড়া দিয়ে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। ফলে ৪১ রান করে ভাঙে শান্তর প্রতিরোধ। মাঝে উইকেটে এসে কট এন্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন সাকিব আল হাসান।
তবে উইকেটে এসে বাংলাদেশের রানের গতি বাড়াতে দারুণ ভূমিকা রাখেন তাওহিদ হৃদয়। আজও শেষ দিকে বাংলাদেশের রানের গতি বাড়ান তিনি। তাতে সফলও হয়েছেন। ২৮ বলে ৪০ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে বাংলাদেশকে ১৪০ রানের পুঁজি এনে দেন তরুণ এই ব্যাটার।
তবে এই রানটা আরও বাড়ত, যদি না হ্যাটট্রিক করে বাধা হয়ে দাঁড়াতেন প্যাট কামিন্স। একে একে মাহমুদউল্লাহ, তাওহিদ ও শেখ মেহেদিকে ফিরিয়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন এই অজি পেসার। কামিন্স অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক করেন। ২৯ রান দিয়ে সেরা বোলারও তিনি। এছাড়া ২৪ রান দিয়ে দু’টি উইকেট শিকার করেন অ্যাডাম জাম্পা।
রান তাড়ায় নামা অস্ট্রেলিয়ার সামনে প্রথম ওভার করতে এসে ৫ রান দেন মাহেদী হাসান। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে সুযোগ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু তানজিমের বল পয়েন্টে দাঁড়িয়ে নিতে পারেননি তাওহিদ হৃদয়। এরপর ঝড়ের শুরু অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারের।
চতুর্থ ওভারে তাসকিন ১৫ ও পরের ওভারে মোস্তাফিজ দেন ১৪ রান। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ১০ রান দেন তানজিম। ছয় ওভারে তারা তোলে ৫৯ রান। এরপর দুই বল হতেই নেমে আসে বৃষ্টি।
বৃষ্টির বিরতির পর ফিরে বাংলাদেশকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন রিশাদ হোসেন। তার বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত যান ট্রাভিস হেড। এর আগে ২১ বলে তিন চার ও দুই ছক্কায় ৩২ রান করেন তিনি। নিজের পরের ওভারে এসেও উইকেট পান রিশাদ।
এবার তার বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন মিচেল মার্শ। কিন্তু এরপর অজিদের ঝড় থামেনি। আগে থেকেই উইকেটে থাকা ওয়ার্নারের সঙ্গে এবার যোগ দেন ম্যাক্সওয়েল। ১২তম ওভারে বৃষ্টি নামার আগে ১৪ বলে ৩০ রান করেন দু’জন।
৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৫ বলে ৫৩ রান করে ওয়ার্নার এবং ৬ বলে ১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন ম্যাক্সওয়েল। ১১ ওভার ২ বলের সময় বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়। ম্যাচ তখন অস্ট্রেলিয়ার অনেকটা মুঠোয়। এই ধাপে অনেকটা অপেক্ষার পর আর খেলা শুরুর অবস্থা আসেনি। ম্যাচের সমাপ্তি টানেন আম্পায়াররা।