তিমির বনিক, মৌলভীবাজার থেকে: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ভাষা শহীদ সুদেষ্ণা দিবস পালিত হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চ মাতৃভাষার অধিকার আদায় করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নৃশংস বন্দুকের গুলিতে প্রাণ দেন ৩২ বছর বয়সী সুদেষ্ণা সিংহ এই মহিয়সী ভাষাবিপ্লবী।
এ উপলক্ষে ১৬ মার্চ বুধবার সকাল ১০ ঘটিকায় কমলগঞ্জ উপজেলা মাধবপুর শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চে র্যালি, প্রতিকৃতিতপ শ্রদ্ধাঞ্জলী, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শহীদ গিরিন্দ্র স্মৃতি পরিষদের সভাপতি উপেন্দ্র সিংহ সভাপতিত্বে ও নির্মল এস পলাশ এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতির সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনন্দ মোহন সিংহ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ, সাধারণ সম্পাদক কমলা বাবু সিংহ, মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি গবেষণা কর্মকর্তা প্রভাস চন্দ্র সিংহ, মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতির সমিতি শ্রীমঙ্গল শাখার সভাপতি অনিল কুমার সিংহ, সমাজ সেবক দেবাশীষ সিংহ। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আনবিটেন ক্লাবের সভাপতি শিক্ষক রানা রঞ্জন সিংহ, লেখক নাট্য নির্মাতা শুভাশিস সিনহা, সমাককর্মী সঞ্জয় সিংহ প্রমুখ।
জানা যায়, সুদেষ্ণাই পৃথিবীর সর্বপ্রথম আদিবাসী ভাষাশহীদ। যিনি মাতৃভাষা স্বীকৃতির আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করেছেন। পৃথিবীতে এ যাবত দু’জন নারী ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। সুদেষ্ণা সিংহ শহীদ হয়েছেন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলনে এবং কমলা ভট্টাচার্য আসামের বাংলাভাষা আন্দোলনে শহীদ হন।
১৬ মার্চ ভারত আসামের পাথারকান্দির কলকলিঘাট রেলস্টেশনে ৫০১ ঘণ্টার রেলপথ-রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বরাক উপত্যকায় মণিপুরী ভাষাবিপ্লবীরা ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়।
আন্দোলনকারীদের একটি মিছিলে ভারতীয় পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলে গুলিতে প্রাণ হারান সুদেষ্ণা সিংহ। এ ঘটনায় অসংখ্য ভাষা বিল্পবী আহত হন এবং ব্যাপক ধরপাকড় হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর করিমগঞ্জ সদর হাসপাতালের বারান্দায় একটি স্ট্রেচারে অবহেলায় ফেলে রাখা হয় সুদেষ্ণার লাশ।
পরবর্তীতে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা স্বীকৃতির আন্দোলনকে উপেক্ষা করতে পারে না আসাম সরকার। অবশেষে ২০০১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বরাক উপত্যকার ১৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় শিক্ষাদান চালু করে।