May 17, 2024, 8:49 am
সর্বশেষ:

বিশ্বে প্রতি ৪ জনে আক্রান্ত ১, স্ট্রোক রুখতে কী কী খেয়াল রাখতেই হবে

  • Last update: Friday, October 30, 2020

ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন বা ডব্লিউএসও এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ সমীক্ষা বলছে বিশ্বের প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের প্রতি ৪ জনের ১ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। কেউই জানি না আমার আপনার মধ্যে সেই ৪ জনের ১ জন রয়েছেন কি না! এক বার স্ট্রোক হলে অধিকাংশকেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বা অন্য শারীরিক অসুবিধা নিয়ে গৃহবন্দি জীবন যাপন করতে হয়। এ দিকে ব্রেন স্ট্রোক এমনই এক অসুখ যা নিজেদেরই ডেকে আনা। আর এই কারণেই এ বছরের স্ট্রোক দিবসের শপথ ছিল স্ট্রোকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যুক্ত হওয়া।

প্রত্যেককে শরীর ও মনে সক্রিয় থেকে স্ট্রোকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। স্ট্রোক ফাউন্ডেশন অফ বেঙ্গলের প্রতিষ্ঠাতা নিউরোসার্জন দীপেশ কুমার মণ্ডল জানান, স্ট্রোক আটকানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।

ইউরোপ-আমেরিকার চিকিৎসকদের মত, ১ ঘণ্টার মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্তর মস্তিষ্কের জমাট বাঁধা রক্ত ক্লট বাস্টিং ওষুধ প্রয়োগ করে গলিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক করতে পারলে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। স্ট্রোকের ১ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা হলে সব থেকে ভাল ফল পাওয়া যায়, তাই এই সময়কে বলে ‘গোল্ডেন আওয়ার’। বিশেষজ্ঞদের কথায় সময় নষ্ট মানেই মস্তিষ্ক নষ্ট।

যত সময় বয়ে যাবে ততই মস্তিষ্কের কোষ অকেজো হয়ে গিয়ে রোগীর পক্ষাঘাত-সহ নানা সমস্যা বাড়বে। আর এই কারণেই গোল্ডেন আওয়ারের উপর এতগুরুত্ব দেওয়া হয়। দীপেশ মণ্ডল জানান, বিদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থাকলেও এ দেশে ১ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরুর পরিকাঠামো নেই বললেই চলে। তবু স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলে যত দ্রুত সম্ভব কাছাকাছি ভাল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করা উচিত বলে চিকিৎসকদের মতামত।

স্ট্রোক সম্পর্কে বলতে গিয়ে দীপেশ মণ্ডল জানান, আমাদের দেশে ৫০% হেমারেজিক স্ট্রোক, এ ক্ষেত্রেও দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে। বিশ্বের মোট মৃত্যুর কারণের দ্বিতীয় স্থানে ব্রেন স্ট্রোক। তাই সতর্কতা নিতে হবে সব স্তরেই।

পৃথিবীর মোট ৮ কোটি স্ট্রোক আক্রান্ত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে নিজের, পরিবারের ও দেশের বোঝা হয়ে দিন যাপন করছেন। আমাদের দেশে স্ট্রোক আক্রান্ত পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষ ১ কোটি বা তারও বেশি, বললেন দীপেশবাবু। এই অসুখ সম্পর্কে সচেতন হলে ৯০% ক্ষেত্রে তা এড়িয়ে চলা যায়।

স্ট্রোক সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন বা ডব্লিউএসও ২০০৬ সালে ২৯ অক্টোবর সারা বিশ্বে স্ট্রোক দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল এ দেশেও স্ট্রোক নিয়ে সচেতনতামূলক নানা অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে।

নিউরোলজিস্ট অংশু সেন জানান, বিভিন্ন কারণে মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনীর পথ সরু হয়ে গেলে এবং আচমকা চর্বির ডেলা আটকে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এ রকম হলে মস্তিষ্কের কোষ অক্সিজেনের অভাবে নিস্তেজ হতে হতে অকেজো হয়ে যায়। এটাই স্ট্রোক। উচ্চ রক্তচাপ-সহ নানা ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনীর পথ আটকে দেয়। দু ধরনের স্ট্রোক হয়, ইস্কিমিক আর হেমারেজিক। ইস্কিমিক স্ট্রোকে রক্ত চলাচল থেমে যায়।

হেমারেজিক স্ট্রোকে দুর্বল রক্তনালি ছিঁড়ে রক্তপাত হয়। এতে রয়েছে ট্র্যানজিয়েন্ট ইসকিমিক অ্যাটাক বা টিআইএ। কোনও ছোট রক্তের ডেলা মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনীতে সাময়িকভাবে আটকে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্যে রোগীর সামান্য কিছু সমস্যা ও ব্ল্যাক আউট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আপাতদৃষ্টিতে মারাত্মক না হলেও টিআইএ-র পরে বড় অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে। তাই কোনও অবস্থাতেই সামান্য সমস্যাও ফেলে রাখা উচিত নয় বলে জানান অংশু।

বিশ্বের ৩২টি দেশের বিভিন্ন রোগীর উপর সমীক্ষা করে ল্যান্সেট জার্নালে ফল প্রকাশিত হয়েছে। স্ট্রোকের জন্যে মোট ১০টি কারণকে দায়ী করা হয়। এদের প্রতিটিই প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিয়মিত চেক-আপ আর সতর্কতা মেনে রোজের জীবনযাত্রায় কিছু বদল আনলে আচমকা মারাত্মক স্ট্রোকের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

কী কী মনে রাখতে হবে-
• অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে (৪৮% ক্ষেত্রে)
• যাঁরা দিনভর বসে কাজ করেন, হাঁটা চলা-সহ কায়িক শ্রম নেই বললেই চলে তাঁদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি ( ৩৬% ক্ষেত্রে)
• বাড়তি কোলেস্টেরলের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তাদেরও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি (২৭% ক্ষেত্রে)
• পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে ভাজাভুজি, ফাস্ট ফুড বেশি খেলে আচমকা স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে (২৩% ক্ষেত্রে)
• পেটে মেদ থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে (১৯% ক্ষেত্রে)
• লাগাতার স্ট্রেস ও মানসিক অবসাদ-সহ অন্যান্য মানসিক সমস্যা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ে ( ১৭% ক্ষেত্রে)

এ ছাড়া আর কী কী বিষয় রয়েছে
• সিগারেট-সহ তামাক অন্যান্য অনেক অসুখের সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে।
• নিয়মিত অতিরিক্ত মদ্যপানে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
• হার্টের অসুখ থাকলে ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।
• যাঁরা ডায়াবিটিসে ভুগছেন, ডায়েট বা শরীরচর্চা করেন না, তাঁদের স্ট্রোকের সমস্যা বেশি।

একটু সতর্ক হলে প্রতিটি রিস্ক ফ্যাক্টরকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিশেষ করে ব্লাড প্রেশার ও সুগার থাকলে নিয়মিত চেক-আপ ও শরীরচর্চা করে এবং সঠিক ডায়েট নিলে সার্বিকভাবে ভাল থাকা সম্ভব।

অংশু সেন জানান, স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে ওজন স্বাভাবিক রাখতে হবে। এ জন্য সুষম খাবার খাওয়া জরুরি। রোজকার ডায়েটে রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে সব্জি ও ফল। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন আধ ঘণ্টা করে দ্রুত পায়ে হাঁটুন। রক্তচাপের সমস্যা এবং সুগার থাকলে তা তো নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। আর ধূমপান-সহ সবরকমের তামাক সেবনকে বিজায় জানান আজই।

পেটে মেদ জমতে দেবেন না। ভুঁড়ি এবং নিতম্বের অনুপাত যে ০.৮৫ এর মধ্যে থাকে খেয়াল রাখতেই হবে। তাহলে আচমকা স্ট্রোক থেকে রেহাই পাবেন। স্ট্রোকের লক্ষণ হিসেবে কখনও হাঁটা-চলা বা ভারসাম্য রক্ষার সমস্যা, পড়ে যাওয়া, হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া, কথা বলতে ও বোঝাতে অসুবিধা হওয়া, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা ও মাথা ঘোরার মতো নানা উপসর্গ দেখা যায়।

অল্পস্বল্প লক্ষণ হলেও তা অবহেলা না করে নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিলে পরবর্তীতে জটিলতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মারাত্মক এই অসুখ সম্পর্কে সকলে সচেতন হন, স্ট্রোকমুক্ত থাকুন, ভাল থাকুন।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC