এনামুল হক রাশেদী:
অবৈধভাবে সম্পদ বাজেয়াপ্তের অভিযোগে বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে মামলা করেছেন দেশের অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পপতি এস আলম ও তাঁর পরিবার।
লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, গত ২৭ অক্টোবর (সোমবার) এস আলম পরিবারের আইনজীবীরা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটস (ICSID)-এ সালিশি আবেদন দাখিল করেছেন। সংবাদমাধ্যমটি বুধবার সকালে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এস আলম পরিবারের দাবি, বাংলাদেশ সরকার তাদের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক ও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে—
- ব্যাংক হিসাব জব্দ ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত,
- ভিত্তিহীন ব্যবসায়িক তদন্ত, এবং
- তাদের বিরুদ্ধে “প্ররোচনামূলক গণমাধ্যম অভিযান” চালানো।
এসব পদক্ষেপের কারণে পরিবারের শত কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন, যদিও ক্ষতিপূরণের সুনির্দিষ্ট অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি।
ইউনূস সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এস আলম পরিবারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। নতুন সরকারের জন্য এই আন্তর্জাতিক সালিশি মামলা এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সরকার দাবি করেছে, পূর্ববর্তী ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার (২৩ হাজার ৪০০ কোটি) পাচার হয়েছে। এই অর্থ উদ্ধারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
গভর্নরের অভিযোগ
গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের দাবি, এস আলম পরিবার বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “এই বিপুল অর্থ কোথায় গেল?”
তিনি আরও বলেন, এস আলম ও তাঁর সহযোগীরা ছয়টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জালিয়াতি ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িত। “আমাদের হাতে পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে,”—যোগ করেন তিনি। “এসব ব্যাংকের অবস্থা এতটাই নাজুক যে সরকারকে বেইলআউট দিতে হয়েছে।”
সিঙ্গাপুরে বসবাস ও চুক্তির সুরক্ষা
এই সালিশি মামলা বাংলাদেশ–সিঙ্গাপুর দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি (BIT)–এর আওতায় দায়ের করা হয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, এস আলম পরিবার ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে এবং ২০২১–২০২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে।
তাঁদের দাবি, সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে তারা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তির অধীনে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রাখেন।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানান, “যখনই আবেদন হাতে পাব, আমরা যথাযথভাবে এর জবাব দেব।” তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
পূর্বের সতর্কবার্তা
গত বছরের ডিসেম্বরে এস আলম পরিবারের আইনজীবীরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করেছিলেন—ছয় মাসের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা না হলে তাঁরা আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হবেন। অবশেষে তারা সেই পদক্ষেপই নিলেন।
এস আলম গ্রুপের অবস্থান
এস আলম গ্রুপ বরাবরই সরকারের সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, গভর্নর আহসান মনসুরের উত্থাপিত অভিযোগ “সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস

 
									