ইতিহাস গড়ার অংশ হতে পেরে উচ্ছ্বসিত শ্রমিকরা
পর্দা উঠেছে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ বা ফিফা বিশ্বকাপ- ২০২২ এর। রোববার (২০ নভেম্বর) জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় মহা এ আয়োজনের। সে অনুষ্ঠান ও আসরের প্রথম ম্যাচ উপভোগে অংশ নিয়েছেন অসম্ভবকে সম্ভব করে এ মহাযজ্ঞ সফল করার পেছনের কারিগররা অর্থাৎ স্টেডিয়াম ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে কাজ করা শ্রমিকরা।
বিশ্বকাপ উপলক্ষে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাতারের চেহারা বদলে ফেলতে কাজ করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের লাখ লাখ শ্রমিক। অবশ্য আফ্রিকার কিছু দেশ থেকেও শ্রমিক নিয়োগ দেয় কাতার কর্তৃপক্ষ।
রোববার ফ্যানজোনগুলোতে দেখা যায় অভিবাসী সেসব শ্রমিকদের। কেউ হয়তো অফিস শেষ করে এসেছেন, কেউ বা ছুটি নিয়েছেন, আবার কারও হয়তো এদিন সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। সবাই মিলে একজায়গায় বসে খেলা দেখার মজা উপভোগ করেছেন তারা।
ফ্যানজোনে জড়ো হওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ মহাজজ্ঞের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকতে পেরে রোমাঞ্চিত তারা। এতদিনের এত হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর এ আয়োজন দেখে রীতিমতো শিহরিত হচ্ছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিজার এক প্রতিবেদনে ৪৫ বছর বয়সী বাংলাদেশি শ্রমিক মুহাম্মদ হোসাইন বলেন, বিশ্বকাপের কাজ করতেই দেশ ছেড়ে কাতারে এসেছিলাম। সেই কাজ শেষে এখন একটি নতুন কোম্পানিতে জেনারটর অপারেচর হিসেবে কাজ করছি।
‘আজ সবাই মিলে একসঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও খেলা উপভোগ করেছি। প্রতিটি মুহূর্তে রোমাঞ্চ ছুঁয়ে গেছে আমাকে।’
পিটার নামে ভারতীয় অপটিক্যাল ফাইবার শ্রমিক বলেন, ১৫ বছর ধরে কাতারে বসবার করছি। বিশ্বকাপের আগে কাতারে কোনো মেট্রো ও বাস সার্ভিস ছিল না।
‘এমনকি, এখন যেসব বড় বড় ভবন ও চকচকে মহাসড়ক দেখা যাচ্ছে, তার কোনো কিছুই হয়তো হতো না। বিশাল এ কর্মজজ্ঞের অংশ হতে পেরে খুবই গর্বিত অনুভব করছি।’
একাধিক অভিবাসী শ্রমিক জানান, উদ্বোধনী ম্যাচে তারা কাতারকেই সমর্থন করেছেন, যদিও কাতার ম্যাচটি জিততে পারেনি। জিতলে সারারাত রাস্তা জুড়ে আনন্দমিছিল করার পরিকল্পনা ছিলো তাদের।
এদিকে উচ্ছ্বাস থাকলেও টিকিটের মূল্য ও না পাওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অনেক শ্রমিক। কাতারের নাগরিকরা ৪০ কাতারি রিয়াল বা দুই হাজার ২৭৭ টাকার বিনিময়ে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো উপভোগ করতে পারবেন। বাকিদের গুনতে হবে প্রায় ৮০০ ডলার বা ৮৩ হাজার টাকা।
পিটার নামের ভারতীয় ওই শ্রমিক বলেন, টানা কয়েকদিন চেষ্টা করেও ৪০ রিয়ালের টিকিট পাইনি। প্রথম দিকেই কম দামের টিকিটগুলো পাওয়া যায়নি এখন তো আর পাবোই না।
আরভিন কুমারে নামে পিটারে এক সহকর্মী জানান, ৬০০ কাতারি রিয়াল খরচ করে নেদারল্যান্ডস-ইকুয়েডর ম্যাচের একটি টিকিট পেয়েছি। অথচ মাসে আমার বেতন মাত্র এক হাজার কাতারি রিয়াল। এ বেতন দিয়ে আমাকে নিজের খরচ ও ভারতে পরিবারের খরচ পাঠাতে হয়।
কাতারে শ্রমিকদের নিম্ন মজুরি, দরিদ্র জীবনযাপন ও নিরাপত্তার অভাব নিয়ে শুরু থেকেই তীব্র সমালোচনা করে আসছিল বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী ও কাতারের সমালোচনাকারী দেশগুলো।
২০২০ সালে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমনীতিতে সংস্কার আনে কাতার সরকার। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো- তথাকথিত অনাপত্তিপত্র বাতিল। এর মাধ্যমে শ্রমিকরা তাদের নিয়োগকারীর কাছ থেকে অনুমতি না নিয়েই চাকরি পরিবর্তন করার অধিকার লাভ করেন। তাছাড়া শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি করা হয় ১,০০০ কাতারি রিয়াল বা প্রায় ২৯ হাজার টাকা।