
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিশেষ ফ্লাইটে দেশে আসা যাত্রীদের এখন থেকে শর্ত সাপেক্ষে তিন দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
শনিবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার রোধে আকাশ পথে দেশে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে বেশ কয়েকটি শর্তসহ এমন চারটি নির্দেশনা দিয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান শনিবার বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সরকারের নেওয়া এসব সিদ্ধান্ত এয়ারলাইন্সগুলোকে জানাতে বেবিচক এই সার্কুলার জারি করেছে।“ তিনি জানান, লকডাউনের মেয়াদ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত হওয়ায় এই নির্দেশনাগুলো ২৪ থেকে ২৮ এপ্রিলের জন্য দেয়া হয়েছে। পরে প্রয়োজনে নির্দেশনাগুলোর সময় সীমা বাড়ানো হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক যাত্রী ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন করবেন। আগে তাদের পুরো সময়টা সরকারি সেন্টার বা হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করতে হত। এখন যাদের পিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা কোভিড-১৯ পরীক্ষার ‘নেগেটিভ সার্টিফিকেট’ রয়েছে এবং তাদের মধ্যে যারা ভ্যকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন বা যারা এখনো কোনো ডোজ নেননি তাদের সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে বা হোটেলে নিজ খরচে তিন দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
ফাইল ছবিফাইল ছবিএরপর পরীক্ষায় নেগেটিভ এলে বাকি ১১ দিন তিনি বাসায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। এটি স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চিত করবে। শনিবার বেবিচক সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যার্ডার্ড ও রেগুলেসন্স) চৌধুরী এম জিয়া উল কবির স্বাক্ষরিত সার্কুলারে বিদেশগামী ও বিদেশ ফেরত যাত্রী এবং সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বেবিচকের দেওয়া নির্দেশনাগুলো হল:
যারা দেশের বাইরে যাবেন বা বিদেশ থেকে আসবেন তাদের বাধ্যতামূলকভাবে পিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষা করিয়ে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে। ফ্লাইট ছাড়ার ৭২ ঘন্টা আগে এই পরীক্ষা করতে হবে।
যারা দেশে ফিরবেন এবং যারা এরই মধ্যে দুই ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়েছেন, যাদের পিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষার পর কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট রয়েছে এবং ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রমাণপত্র রয়েছে তাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন তাদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করবেন। যারা বিদেশ থেকে পিসিআর পদ্ধতিতে কোভিড-১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে দেশে আসবেন এবং এরই মধ্যে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন কিংবা যারা নেননি তাদের সরকার নির্ধারিত কেন্দ্রে বা হোটেলে নিজ খরচে বাধ্যতামূলকভাবে তিন দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। তিন দিনের এই কোয়ারেন্টিন শেষে পিসিআর পদ্ধতিতে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য যাত্রীর নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এতে নেগেটিভ আসলে তাকে ১১ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনের জন্য ছাড়া হবে, যা স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চিত করবে। পরীক্ষায় পজেটিভ আসলে যাত্রীকে যেখানে সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে, এমন কোথাও নিজ খরচে আইসোলেশনে থাকতে হবে।
যেসব যাত্রী দুই ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়েছেন এবং যাদের পিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষা করানোর পর কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট রয়েছে ও ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রমাণপত্র রয়েছে, তাদের বিষয়ে এয়ারলাইন্স নিশ্চিত হয়েই শুধু বোর্ডিং পাস ইস্যু করবে। অন্যাদিকে যেসব যাত্রী পিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষা করানোর পর কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছেন এবং এরই মধ্যে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন কিংবা যারা এখনো ভ্যাকসিন নেননি তাদের জন্য সরকার নির্ধারিত প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে আসন রয়েছে কিনা বা ওই যাত্রীদের প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতের জন্য হোটেলে থাকার রিজার্ভেশনের প্রমাণপত্র রয়েছে কিনা সেগুলোও এয়ারলাইন্স নিশ্চিত করবে।
প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতে সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন না থাকলে, যাত্রীরা ফ্লাইটেই থাকবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের হোটেল রিজার্ভেশন নিশ্চিত করা করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে সর্বাত্মক লকডাউনের মধ্যে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে-বিদেশে সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় বেবিচক। তবে এই সময়ে প্রবাসীদের আনা-নেওয়ার জন্য সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কাতার ও ওমানের বিশেষ ফ্লাইটগুলো আগের মতই চালু ছিল।
গত বুধবার থেকে বেবিচক চীনে চারটি এয়ারলাইন্সকে বিশেষ বিবেচনায় ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়।ওই দিন থেকে সীমিত পরিসরে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতিও দেওয়া হয়। সর্বশেষ রবিবার ঢাকা থেকে কুয়েত ও বাহরাইনে যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনার জন্য দুটি এয়ারলাইন্সকে ‘বিশেষ বিবেচনায়’অনুমতি দেওয়া হয়। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর সংক্রমণ প্রতিরোধে ওমান সরকার ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ২৪ এপ্রিল থেকে দেশটিতে কোনো ফ্লাইট চালাতে পারছে না বাংলাদেশ।