বিমানের গুদাম থেকে ঢাকার চীনা দূতাবাসের আনা এন৯৫ মাস্ক চুরি হয়েছে। বাংলাদেশের কভিড-১৯ যোদ্ধাদের জন্য এসব মাস্ক এনেছিল ঢাকার চীনা দূতাবাস। গত ১৬ জুলাই মাস্ক চুরির ঘটনাটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। একই সঙ্গে এসব পণ্যের গুদাম ভাড়া মওকুফের অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগে দূতাবাস ঘটনাটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়।
কভিড রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে দেশে বহু অঘটনের জন্ম হয়েছে। দেশ-বিদেশে এসব সংকট নিয়ে নানা ধরনের প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে। এরই মধ্যে চীনা দূতাবাসের আনা মাস্ক চুরির ঘটনাটি ঘটল।
সূত্রগুলো বলছে, চীনা দূতাবাস ১৩০ কার্টন এন৯৫ মাস্ক ঢাকা আনে। শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসের মাধ্যমে আনা এসব মাস্কের ওজন ছিল ১ হাজার ৬০৫ কেজি। গত ৬ জুন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসব মাস্ক আসে। বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলার হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এসব মাস্ক গ্রহণ করে। পরে দূতাবাসের পণ্য হিসেবে আসা এসব মাস্ক বিমানের গুদামে রাখা হয়। কাস্টমসসহ অন্যান্য সব প্রক্রিয়া শেষে এসব পণ্য গ্রহণ করতে যায় চীনা দূতাবাসের ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট মেসার্স বারল প্যাকার্স অ্যান্ড শিপার্স। ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট কর্মীরা সেখানে দেখতে পান ১৩০ কার্টনের মধ্যে ২০ কার্টন ছেঁড়া ও ফাটা। খোলা এসব কার্টন থেকে মাস্ক বের করার স্পষ্ট চিহ্ন ছিল তাতে। বারল প্যাকার্স অ্যান্ড শিপার্স পণ্য গ্রহণ না করে বিষয়টি দূতাবাসকে জানায়। দূতাবাসের স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল কোনো ছেঁড়া বা ফাটা কার্টন গ্রহণ করা যাবে না। খোলা অবস্থায় থাকা কার্টন তো নয়ই।
গত ২১ জুন ক্লিয়ারিং এজেন্ট বারল প্যাকের্স অ্যান্ড শিপার্সের বিজনেস কো-অর্ডিনেটর এমএ জামান বিমানকে মালামালগুলো দ্রুত হস্তান্তর করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তাগাদা দেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্যও তিনি বিমানকে অনুরোধ করেন। পরের দিন চীন দূতাবাসও বিষয়টি সুরাহা করার জন্য অনুরোধ জানায়। চিঠিতে দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ইয়াং জিপিং বলেন, ‘চীন দূতাবাস এসব পণ্য এনেছে কভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে যেসব বাংলাদেশি যুদ্ধ করছে তাদের সহায়তার জন্য। কিন্তু আমাদের ক্লিয়ারিং এজেন্ট সব প্রক্রিয়া শেষ করে বিমানের গুদাম থেকে পণ্য গ্রহণ করতে গিয়ে দেখতে পায় কিছু কার্টন ছেঁড়া, ফাটা এবং কিছু কার্টন থেকে পণ্য বের করা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।’ চীনা দূতাবাস আরও জানায়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েই এসব ট্যাক্স ফ্রি পণ্য বাংলাদেশে আনা হয়। কার্টন থেকে যেসব মাস্ক হারানো গিয়েছে তা অবশ্যই বিমানের গুদামে থাকা অবস্থায় হারিয়েছে।
বিমানের নিয়ম হচ্ছে দূতাবাসের পণ্য ১৫ দিনের মধ্যে বিমানের গুদাম থেকে বের করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে পণ্য বের করতে না পারলে নির্ধারিত হারে ক্ষতিপূরণ বা গুদাম ভাড়া দিতে হবে। ২০টি কার্টন ছেঁড়া ও পণ্য চুরির ঘটনার ধারাবাহিকতায় চীনা দূতাবাসের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যায়। এবার বিমান জরিমানার চিঠি দূতাবাসকে ধরিয়ে দেয়। দূতাবাস জরিমানা মওকুফের আবেদন করলে বিমান তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানানোর পরামর্শ দেয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বিমানের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জানাবে। বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বিষয়টি সুরাহা করে বিমানকে নির্দেশনা দেবে।
বিমান এসব মালামাল চুরি বা খোয়া যাওয়ার জন্য দায়ী নয় বলে চীনা দূতাবাসকে জানায়। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের অনুরোধে বিমান ডেপুটি ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) নাসিম আহমেদকে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ কমিটিও মনে করে এসব মালামাল চুরি বা খোয়া যাওয়ার জন্য শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস দায়ী।
যদিও এ ধরনের তদন্তে আগেও দেখা গেছে, বিমান নিজস্ব অফিসারের সমন্বয়ে যেসব তদন্ত কমিটি গঠন করে সেগুলোর অনেক রিপোর্টই একপেশে হয়ে থাকে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. মোকাব্বির হোসেনকে ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এমনকি এ সংক্রান্ত মেসেজের জবাবও দেননি।
গত ৩০ জুন বিমানের ডেপুটি ম্যানেজার মির্জা হাসান তারিক চীনা দূতাবাসকে জানান, বিষয়টি সুরাহার জন্য শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসকে জানানো হয়েছে।
এর আগেও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি কোম্পানির আমদানি করা এন৯৫ মাস্ক চুরির ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের জন্য তিন লাখ এন৯৫ মাস্ক আমদানি করা হয়েছিল। এ চালানের কিছু মাস্ক চুরির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের লিখিত অভিযোগ পেয়ে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি তদন্তে নেমে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে।
উৎসঃ দেশ রুপান্তর