আবদুল্লাহ আল মামুন, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: লকডাউনে শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়, পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল পরিবহনে অসুবিধা, উৎপাদিত পণ্যের বাজার মূল্য না থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছে সাতক্ষীরা বিসিকের ব্যবসায়ীরা। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পণ্য উৎপাদন করে বাজারজাত করতে না পারায় দিন দিন ক্ষতি আরও বাড়ছে।
একদিকে পণ্য বিক্রয় করতে না পেরে আর্থিক সংকটে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকদের বেতন-ভাতাও পরিশোধ করতে পারছে না ঠিক সময়ে। ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছে এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েক শ’ শ্রমিক।
সাতক্ষীরা বিসিক কার্যালয় থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরা শহরের অদূরে বেতনা নদীর তীরে বিনেরপোতা নামক স্থানে ১৯৮৬ সালে ১৫.৭৫ একর জমির উপর ৯৬টি প্লট নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বিসিক শিল্পনগরী। এতে ২৮টি শিল্প স্থাপনা থাকলেও বর্তমানে চালু রয়েছে ২৪টি শিল্প কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে পুরুষ ও নারী মিলিয়ে শ্রমিক রয়েছে এক হাজার এক শ’। প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৩ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে উৎপাদন হয়েছে ৭৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, করোনাকালীন সময়ে নানা সমস্যায় সাতক্ষীরা বিসিক শিল্প নগরীতে উৎপাদন কমেছে ৫০ শতাংশ। পূর্বে প্রতি মাসে ১০-১২ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হলেও সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র চার কোটিতে।
সাতক্ষীরা বিসিক শিল্প নগরীতে শিল্প স্থাপনার মধ্যে রয়েছে দুই টি মাছ প্রক্রিয়াজাত ইউনিট, মৎস্য হ্যাচারী, দুগ্ধ শিতলীকরণ, বরফ কারখানা, প্লাইউড ইন্ডাজস্ট্রিজ, বেকারি, প্লাস্টিক ইন্ডাজস্ট্রিজ, লবন ফ্যাক্টরী, ভাস্কর্য ফ্যাক্টরী, ভেটেনারী ওষুধ ফ্যাক্টরী, ইনকিউবেটর ফ্যাক্টরী, ওয়েল্ডিং ফ্যাক্টরী, সেলাই মেশিং এর যন্ত্রাংশ ফ্যাক্টরী ও হস্ত শিল্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে কোটি কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন করতে পারলেও, লকডাউনের কারণে বাজারজাত করা যাচ্ছে না। এতে মালামাল গোডাউনে থেকে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। অনেকে আবার বলছেন, পণ্য উৎপাদনে যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে বাজারে পণ্যের দাম তার চেয়ে অনেক কম।
তবে নতুন উদ্যোক্তারা বলেছেন, ২০২০-২১ অর্থ বছরে এখান থেকে উৎপাদন হয়েছে ৭৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা পণ্য। নতুন উদ্যোক্তাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে বিসিক শিল্পনগরী এরিয়া বৃদ্ধি করে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলে এ উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। তাদের দাবী, প্রায় ৩৫ বছরের পুরাতন সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরী সে সময়ের কার জন্য ঠিক থাকলেও এখন নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। চাহিদা বাড়ছে প্লটের। কিন্তু নতুনদের চাহিদার তুলনায় প্লট নেই। তাই বিসিক শিল্পনগরীর প্লট বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি। এতে উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি কর্মসংস্থান হবে বহু মানুষের।
বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মেসার্স রনি প্লাইউড ইন্ডাষ্ট্রির সত্তাধিকারী জিএম নুরুল ইসলাম রনি বলেন, করোনায় সাতক্ষীরা বিসিকের ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। পণ্য উৎপাদন করে তা বাজারজাত করা যাচ্ছে না। পণ্য গোডাউনে থেকে পঁচে যাচ্ছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠাতে পারবে না ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন বলেন, লকডাউনের কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে উৎপাদন কিছুটা কমে ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। স্বাভাবিক হয়ে উঠতে সময় লাগবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ৪% সুদে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।