বিদেশ গমনে কোভিড-১৯ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। ফলে বিদেশগামী বাংলাদেশের নাগরিকরা দেশের সরকার নির্ধারিত ১৬টি ল্যাবে করোনা নমুনা দিতে এখন ভিড় করছেন। নমুনা দিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকারও হচ্ছেন অনেকে। প্রথমে বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহের কথা বলা হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন বলছে, এরকম কোনো নির্দেশনা নেই। বুথেই নমুনা দিতে হবে যাত্রীদের। শুরু থেকেই দেশে করোনাভাইরাসের পরীক্ষায় নমুনা দেয়ার পর দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফলাফল পেতে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় লেগেছে। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে করোনা রোগীদের কাছ থেকে।
এ পরিস্থিতিতে নমুনা দেয়া সম্ভব হলেও মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার ফলাফল পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিমানযাত্রীদের। বিদেশ যাত্রার তিনদিন আগে এরকম নমুনা দেয়ার ব্যাপারটি তাদের জন্য আরেক ভোগান্তি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন ল্যাবের সংখ্যা ১৬টি হলেও পরিস্থিতি দেখে ল্যাবের সংখ্যা আরো বাড়ানো হতে পারে। প্রথম দিনের পরীক্ষার ফল নির্ধারিত সময়েই দেয়া সম্ভব হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. আনোয়ারুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, ২০শে জুলাই বিমানযাত্রীদের পরীক্ষা শুরু হলেও তার জেলায় গতকালই প্রথম ৫ জন বিদেশগামী করোনার নমুনা পরীক্ষা দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টার মধ্যেই পরীক্ষার ফলাফল বিদেশগামীদের জানিয়ে দেয়া সম্ভব হবে এবং ওয়েবসাইটে তা থাকবে। বুথে এসে নমুনা দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। প্রথমে মৌখিক নির্দেশনায় সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহের কথা থাকলেও তা এখন আর নেই।
ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন মনিরুল আহসান এ বিষয়ে জানান, বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে না। বুথেই নমুনা দিতে হবে যাত্রীদের। প্রথম দিন বিদেশগামী ১১১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাদের ফলাফলও দেয়া হয়েছে। গতকাল ৩৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। আজ ২টার মধ্যে ফলাফল জানানো হবে।
নাগরিকগণের মধ্যে যারা ঢাকা মহানগরীতে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রদান করতে চান তাদেরকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নমুনা দিতে হবে। ঢাকার সিভিল সার্জন অফিসের উদ্যোগে মহাখালীস্থ ডিএনসিসি মার্কেটে অবস্থিত অস্থায়ী কোভিড-১৯ আইসোলেশন কেন্দ্রে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিদেশগামীদের।
ঢাকার বাইরে ১৩টি জেলায় সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনগণের তত্ত্বাবধানে ২০শে জুলাই থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্থান ও সময়সূচি সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানা যাবে। যেসব জেলায় নমুনা সংগ্রহ করা হবে সেসব জেলাগুলো হলো-বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর ও সিলেট। যাত্রীগণকে যাত্রার ৭২ ঘণ্টা পূর্বে নমুনা দিতে হবে।
নমুনা প্রদানের সময় পাসপোর্ট ও টিকিটের ফটোকপি জমা দিতে হবে। মূল পাসপোর্ট ও টিকিট প্রদর্শন করতে হবে। নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রে এসে নমুনা প্রদানের জন্য পরীক্ষা ফি হিসেবে প্রত্যেক যাত্রীকে সরকার নির্ধারিত ৩৫০০ টাকা জমা দিতে হবে। সংগৃহীত নমুনা সরকারি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হবে। যাত্রার ২৪ ঘণ্টা পূর্বে রিপোর্ট প্রদান করা হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৯শে জুলাই জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহের কোনো নির্দেশনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেয়া হয়নি। বুথ থেকে নমুনা সংগ্রহের বিষয়টি নির্দেশনা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।
বিদেশগামীদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেক্টিয়াস ডায়াসিস, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ ঢাকা, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর ও রংপুর মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব থেকে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে।