শৃঙ্খলার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে ‘চেইন অব কমান্ড’ মেনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি সদস্যদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড যে কানো শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। কখনো শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। অর্পিত দায়িত্ব মেনে চলবেন, চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন।”
পিলখানায় বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের সদস্যদের উদ্দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে সরকারপ্রধান বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন- ঈমানের সাথে কাজ করো। সৎ পথে থেকে দেশকে ভালোবাসো। এই দেশ আমাদের, দেশ যত উন্নত হবে আপনাদের পরিবাররাই ভালো থাকবে, সুস্থ থাকবে, উন্নত জীবন পাবে।
“শিক্ষা-দীক্ষা, চিকিৎসা সব ধরনের সুযোগ পাবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। সেই কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবে।”
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ পাশের পরে এই বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে তোলার কথা জানিয়ে প্রতিরক্ষাপ্রধান জানান, আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার লক্ষ্য অর্জনে।
আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যে দেশকে জাতির পিতা একটা যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন।
“আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালীন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।”
কোভিড মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের ফলে বিশ্বের যে মন্দা তৈরি হয়েছে তার প্রভাব যেন বাংলাদেশের ওপর না পড়ে সে জন্য দেশের মানুষকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে অনাবাদি বা পড়ে থাকা জমি চাষের কথা জনগণকে ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রতিটি বিওপিতে কর্মরত বর্ডার গার্ড সদস্যরা কিছু না কিছু উৎপাদন করছেন কিংবা পশুপাখি পালন করছেন জানিয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানান সরকারপ্রধান।
“আমরা কারো কাছে হাত পাতব না। নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করব, নিজেদের মত আমরা চলব এবং মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে আমরা চলব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।”
জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “২০৪১ সালের মধ্যে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ই-ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করবে।”
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, গোটা দেশে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া, তরুণদের ঘরে বসে উপার্জনের সুযোগ করে দেওয়াসহ আওয়ামী লীগ সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
“আমরা চাই, আমাদের সর্বক্ষেত্রে আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। আসুন, সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে জাতির পিতার ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলি। যেখানে যতটুকু অর্জন আমরা করেছি, তার থেকে আরও সামনে আমরা এগিয়ে যাব”, বলেন তিনি।
দেশকে এগিয়ে নিতে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান, অর্থাৎ এই ভূখণ্ড আমাদের ব-দ্বীপ। এই ব-দ্বীপ অঞ্চলটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন উন্নত জীবন পেতে পারে সেই পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের কাজও আমরা শুরু করেছি।”