বাংলা এক্সপ্রেস ডেস্কঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ঘটানো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বুধবার (৬ মে) ভারতের রাষ্ট্রদূত রীভা গাঙ্গুলি দাসের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশের ফেনী নদী সীমান্ত দিয়ে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইন করানোর চেষ্টাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন ড. মোমেন। তিনি বলেন, এধরনের ঘটনায় দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে সে বিষয়ে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সতর্ক করার অনুরোধ করেন তিনি।’
এছাড়া ভারত থেকে আমদানি করা মালামালসহ পেট্রাপোল সীমান্তে আটকে থাকা ট্রাকসমূহ দ্রুত বাংলাদেশে প্রবেশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতীয় হাইকমিশনারকে অনুরোধ করেন।
মোমেন বলেন, ট্রাকগুলো আটকে থাকায় বাংলাদেশি আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এসময় রেলপথে উভয় দেশের মালামাল পরিবহনের বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয় দেশের আমদানি ও রফতানিকারকদের সমস্যা দূর করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ভারত থেকে আসা ৬১ জন ড্রাইভার ও তাদের সহযোগীকে মানবিক কারণে বাংলাদেশ সরকার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তাদের দ্রুত ভারতে ফেরত নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছে বাংলাদেশে ও ভারতের নাগরিক। যে সব দেশে উভয় দেশের শ্রমিকরা আর্থিক ও খাদ্য সংকটে আছে তাদের সহযোগিতায় উভয় দেশ একত্রে কাজ করার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। যদি কোনও শ্রমিক দেশে ফেরত আসে তবে তারা যেন কমপক্ষে ৬ মাসের বেতনের সমপরিমাণ আর্থিক সহায়তা পায় সে বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাবকে ভারতের হাইকমিশনার স্বাগত জানান।
এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে দেওয়া কোভিড-১৯ রিকোভারি অ্যান্ড রেসপন্স ফান্ড গঠনের প্রস্তাবের বিষয়ে উল্লেখ করেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের ন্যাম সম্মেলনেও মোমেন ফান্ড গঠনের একই প্রস্তাব তুলে ধরেন, যেখানে ২০ জন রাষ্ট্রপতি, সাত জন প্রধানমন্ত্রী ও ১০ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অংশ নেন। এ ফান্ডে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা আর্থায়ন করবে বলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এ প্রস্তাবের সঙ্গে ভারতের হাইকমিশনার একাত্মতা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া ৩০ হাজার করোনা শনাক্তকরণ কিট মানবিক সহায়তা হিসেবে পাঠানোর জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী। বৈঠকে রীভা গাঙ্গুলি এ কিট হস্তান্তর করেন।
ইতোপূর্বে ভারতের পক্ষ থেকে করোনা চিকিৎসায় মানবিক সহায়তা হিসেবে ৩০ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক, ১৫ হাজার হেড কাভার, ৫০ হাজার সার্জিক্যাল গ্লাভ্স এবং ১ লাখ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট পাঠানো হয়।
এসময় রীভা গাঙ্গুলি জানান, বাংলাদেশি ডাক্তারদের জন্য ভারত একটি ই-আইটিইসি কোর্সের আয়োজন করছে। এই কোর্সটি ১২-১৩ মে পর্যন্ত ভূবনেশ্বরের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সে বাংলাভাষায় পরিচালিত হবে।