নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পাঁচতলা বাড়ি লিখে না দেয়ায় স্ত্রী ও শ্বশুর শাশুড়িকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছেন এক ঘর-জামাই।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টায় ফতুল্লার কাশিপুর মধ্যপাড়া এলাকায় হাসিনা জাহান কাকলী ও আলমগীর হোসেন দম্পতির বাড়িতে এঘটনা ঘটে।
শাশুড়ি হাসিনা জাহান কাকলী এ ব্যাপারে ফতুল্লা থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও গত দুইদিন ধরে মামলা না নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। হাসিনা জাহান কাকলী অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ১৪ই জুলাই তাদের একমাত্র মেয়ে আফরোজা আলম ছোয়াকে একই উপজেলার দেলপাড়া এলাকার ওয়াদুদ মোল্লার ছেলে আবুল হাসনাতের কাছে বিয়ে দেয়।
বিয়ের ৭ দিন পর থেকে ছোয়াকে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক এবং তাদের পাঁচতলা বাড়ি লিখে দেয়ার জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি করে আসছে আবুল হাসনাত। এবিষয়ে প্রতিবাদ করলে আবুল হাসনাতের সঙ্গে তার বোন ওবায়দা খানমও মারধর করতো ছোয়াকে। ছোয়া গর্ভবর্তী থাকাকালীন সময়ও একাধিকবার স্বামী ও ননদ তাকে মারধর করেছে। আর সামনে দাড়িয়ে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি তা দেখেও কোন প্রতিবাদ না করে উল্টো ছোয়াকে গালাগাল করতো।
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর ছোয়া একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেয়। এরপর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ছোয়া শিশু কন্যাকে বুকে নিয়ে এক কাপড়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। এরপর এ বছরের শুরুতে শ্বশুরবাড়ি এসে কৃতকর্মের ক্ষমা চেয়ে আবুল হাসনাত অঙ্গিকার করেন ছোয়াকে আর নির্যাতন করবে না। তার শ্বশুরবাড়ির দু’তলায় একটি ফ্ল্যাট তাদের থাকার জন্য দিয়ে দেয়া হয়। এ ফ্ল্যাটেই জানুয়ারি থেকে তারা বসবাস করছের। এখানেও আবুল হাসনাত তার মা-বাবা ও বোনকে নিয়ে আসতো। এরমধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে দাবীকৃত যৌতুক ও বাড়ি লিখে না দেয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। তখন আবুল হাসনাত ছোয়াকে অনেক মারধর করে।
এসময় চিৎকার শুনে ছোয়ার বাবা ও মা এসে ঝগড়ার কারণ জানতে চাইলে তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে আবুল হাসনাত। এতে প্রতিবাদ করলে রান্না ঘর থেকে বটি এনে শ্বাশুড়ির মাথায় কোপ দেয়। তখন বাম হাত দিয়ে তিনি কোপ ঠেকান। এসময় তার বাম হাতের অনেকটা অংশ কেটে যায়। ঘটনাটি তাৎক্ষণিক ভিন্ন দিকে নিতে ব্লেড দিয়ে হাসনাত নিজ হাতে কয়েকটি পোচ দিয়ে স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুরীকে হুমকি দিয়ে বলেন, যদি থানা পুলিশের কাছে জানাও তাহলে তোমাদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দিবো। ওই সময় চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এসে তাদের শান্ত করে।
এ ঘটনা ছোয়ার মা হাসিনা জাহান কাকলী আবুল হাসনাতের বাবা-মা ও বোনকে জানালে তারা উল্টো হুমকি দিয়ে বলেন, জামাইকে বাড়ি লিখে দিতে সমস্যা কী। মেয়ের জামাইকে সম্পত্তি লিখে দিতে না চাইলে আপনাদের মেয়েকে তালাক দেবে হাসনাত। এরপর শুক্রবার সকালে হাসিনা জাহান কাকলী বাদি হয়ে আবুল হাসনাত, তার বাবা, মা ও বোনের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ করেন।
এবিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, ঘটনাটি তদন্তের জন্য একজন উপ-পরিদর্শকের সঙ্গে একজন পরিদর্শকও মাঠে রয়েছেস। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উৎসঃ যুগান্তর