বাংলা এক্সপ্রেস ডেস্কঃ করোনা পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে কঠোর নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে বিমান চলাচলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যার জন্য এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বেশ কয়েকটি নির্দেশনা জারি করেছে। বিমানযাত্রায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে বেবিচকের জারি করা নির্দেশনা বাস্তবায়নের কারণে দুর্ভোগ বেড়ে যাত্রী কমে যাওয়ার আশঙ্কা বিমান সংস্থাগুলোর। তাদের মতে, যাত্রীর নাগালের বাইরে চলে যাবে বিমান ভ্রমণ।
এ ছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে উড়োজাহাজের ৩০ শতাংশ আসন খালি রেখে ফ্লাইট পরিচালনার নতুন নিয়মে কয়েক গুণ বাড়তি দামে টিকিট নিতে হবে যাত্রীকে। এরপর নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তিন-চার ঘণ্টা আগেই হাজির হতে হবে বিমানবন্দরে।
এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে করোনামুক্তির সনদ নিয়ে দেশে ফিরছেন প্রবাসীকর্মীরা। সনদ না থাকলে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে যেতে হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে গেলেও একই নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যাত্রীকে নির্ধারিত হাসপাতাল থেকে নিজ খরচেই নিতে হবে এই সনদ। কারো শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি থাকলে তাঁর ভ্রমণ বাতিল করা হবে।
উল্লেখ্য, আগামী ৩০ মে পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রেখেছে বেবিচক। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে যাতে ফ্লাইট চালু করা যায় সে জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সে জন্য ‘গাইডলাইন ফর এয়ার অপারেটরস অন প্রিভেন্টিং স্প্রেড অব কভিড-১৯ অন কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট’ শীর্ষক ৩৫টি নির্দেশনাসংবলিত আদেশ জারি করেছে বেবিচক।
নতুন নির্দেশনায় উড়োজাহাজে উঠে ইনফ্লাইট সেবাদানকারী কেবিন ক্রুদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ (পিপিই), গগলস, ফেসশিল্ড পরতে হবে। দেড় ঘণ্টার কম ফ্লাইটে দেওয়া হবে না খাবার। যাত্রীদেরও বাধ্যতামূলকভাবে পরতে হবে হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক। সামজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে উড়োজাহাজে উঠতে হবে, বসতে হবে পাশের আসন খালি রেখে। প্রতি ফ্লাইট শেষে পুরো উড়োজাহাজ, যাত্রীবাহী বাস জীবাণুমুক্ত করতে হবে। বেবিচকের কাছ থেকে ফ্লাইট ছাড়ার আগে ‘সার্টিফিকেট অব ডিসইনফেকশন’ নিতে হবে, তারপর আরেকটি গন্তব্যে যেতে পারবে। প্রতি গন্তব্যের যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা, হেলথ ডিক্লারেশন ফরম পূরণ করতে হবে। করোনা প্রতিরোধে এমন অনেক নিয়ম-কানুনে আকাশযাত্রা অনেকটাই বদলে যাবে।
নির্দেশনা বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিমান চলাচল শুরু করতে চাই। সেই হিসেবে এয়ারলাইনস এবং বিমানবন্দরগুলোর জন্য ৩৫ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে এবং নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।’
কিন্তু এসব নির্দেশনা মানতে গিয়ে যাত্রী কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথাও জানালেন এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আকাশপথে যাত্রী পরিবহনে বেবিচকের দেওয়া গাইডলাইন মেনে চলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে সিট ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহনসহ নানা রকম সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে বিমানভাড়া আগের অবস্থায় থাকবে না।’
এরই মধ্যে টিকিটের দাম বেড়েছে জানিয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের ১৬৪ আসনের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজে ৪০ সিট খালি রেখে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পরিচালন ব্যয় আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় ভাড়াও বাড়াতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গুয়াংজুতে বর্তমানে তাঁদের যে ফ্লাইটটি চলছে তাতে শুধু চীনা নাগরিকরাই যাচ্ছে। অন্য দেশের কেউ গেলে তাঁকে সেখানে প্রবেশের পরই নিজ খরচে ১৪ দিনের হাসপাতাল অথবা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতেই হবে। ফলে ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় চীনারা ছাড়া কেউ তেমন একটা যাচ্ছে না। আসার সময় পুরো উড়োজাহাজ অনেকটাই খালি আসছে। ফলে ভাড়ার পরিমাণ অনেকটা চার্টার ফ্লাইটের মতো ৩০ শতাংশ বেশি নিতে হচ্ছে।
করোনায় বিমান চলাচল শুরু হলেও টিকিটের দাম বাড়বে বলে আগেই জানিয়ে রেখেছে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আয়াটা)। সংস্থার মহাপরিচালক আলেকজান্দ্রি দে জুনিয়াক বলেছেন, কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ আসন ফাঁকা রাখতে গিয়ে এয়ারলাইনসকে তাদের টিকিটের দাম অন্তত ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে হবে। অনেকে দেউলিয়া হয়ে পড়তে পারে। কেননা পুরনো দামে টিকিট বিক্রি করতে হলে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে, যাতে সাশ্রয়ী উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হবে।
বিশ্বের কয়েকটি দেশ লকডাউন শিথিল করায় আবার পাখা মেলার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনস কম্পানিগুলো। আগামী ২১ মে থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৯টি শহরে পুনরায় নিয়মিত যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছে এমিরেটস এয়ারলাইন। গন্তব্যগুলো হলো—লন্ডনের হিথ্রো, ফ্রাংকফুর্ট, প্যারিস, মিলান, মাদ্রিদ, শিকাগো, টরন্টো, সিডনি ও মেলবোর্ন। যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ভ্রমণকারী যাত্রীরা দুবাইয়ে সংযোগ সুবিধা পাবেন। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে ভ্রমণের জন্য যাত্রীদের অবশ্যই আরব আমিরাতের নির্ধারিত চাহিদা পূরণ করতে হবে।
এমিরেটস প্রধান অপারেটিং কর্মকর্তা আদেল আল রিধা বলেছেন, এমিরেটস যাত্রীদের এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। বিমানবন্দরে সবার জন্য গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেবিন ক্রু, বোর্ডিং এজেন্ট এবং যাত্রীদের সংস্পর্শে আসতে পারেন এমন সবাই পিপিই পরিধান করে সেবা দেবেন। উড়োজাহাজের পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুনাশক কার্যক্রমও আরো জোরদার করা হচ্ছে।
উৎসঃ এভিয়েশন নিউজ