নরসিংদীর রায়পুরায় নেশাগ্রস্ত ছেলের দায়ের কোপে বাবা হাজি আইনুল হক (৭০) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলে ইয়াসিন (২৯) নিজেই ৯৯৯-এ কল করে বাবাকে হত্যার কথা জানায়। পরে পুলিশ এসে তাকে আটক করে।
রোববার (৭ মে) সকালে উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মেজেরকান্দি উত্তরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ইয়াসিন হাজি আইনুল হকের দ্বিতীয় ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ইয়াছিনের স্ত্রী হাওয়া বেগমের সাথে তার বাবা ও মায়ের বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা চলছিল। যে কারণে কার স্ত্রী বেশির ভাগ সময়ই বাপের বাড়িতে থাকতো। আজকে সকালে এসব বিষয় নিয়ে ইয়াছিনের বাবার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবা আইনুলকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে সে ৯৯৯-এ কল দিয়ে বাবাকে হত্যার কথা জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ইয়াছিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানায়, তার বাবা নেশাগ্রস্ত ছেলেকে প্রচুর প্রশ্রয় দিতেন। তার অনেক কুকর্ম তিনি টাকার বিনিময়ে ধামাচাপাও দিয়েছিলেন। সর্বশেষ আজ সেই নেশাগ্রস্ত ছেলেই তাকে কুপিয়ে হত্যা করলো।
নিহত আইনুলের পূত্রবধূ হাওয়া বেগম বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে ৪ বছর। আমার শ্বশুর ও সৎ শাশুড়ির অত্যাচারে আমি সব থেকে বেশি সময় বাপের বাড়িতে কাটিয়েছি। আমাদের বিষয় নিয়ে প্রায়ই শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে ঝগড়া হতো। পরে আজ আমার স্বামী দা দিয়ে কুপিয়ে আমার শ্বশুরকে হত্যা করে।
ইয়াসিন মাদক সেবনের সাথে জরিত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বিয়ের পর দেখতাম তিনি মাদক সেবন করত। কিন্তু গত ১১ মাস ধরে তিনি কোনো মাদক সেবনের সাথে জড়িত না। বিশ্বাস না হলে আপনারা তাকে টেস্ট করে দেখতে পারেন।
নিহতের বন্ধু হাজি কল্যাণ সংগঠনের মির্জানগর ইউনিয়নের সভাপতি হাজি আলম ভূঁইয়া বলেন, আইনুল হাজি কল্যাণের মির্জানগর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আমরা ২০১৪ সালে একসঙ্গে হজ পালন করেছি। তারপর থেকে তার সাথে আমার একটা সুসম্পর্ক। তিনি প্রায়ই এ নেশাগ্রস্ত ছেলেকে নিয়ে কথা বলতেন। তিনি তাকে খুব ভয়ও পেতেন। তার জন্য নরসিংদীতে একটি বাড়িও বিক্রি করতে হয়েছে বলে বলেছিলেন তিনি। আজ সকালে শুনতে পেলাম ইয়াসিন তার বাবা আইনুলকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক নবী হোসেন বলেন, দা দিয়ে কুপিয়ে বাবাকে হত্যার পর ছেলে ইয়াসিন নিজেই ৯৯৯-এ কল করে বিষয়টি জানান। পরে আমরা তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। এ ঘটনায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদের জন্য ইয়াসিনের স্ত্রী ও শাশুড়িকে থানায় নেওয়া হয়েছে। সুরতহাল প্রস্তুতকালে নিহতের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের চারটা জখমের চিহ্ন দেখা গেছে। লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উৎস: আরটিভি