বাসুদেব বিশ্বাস ,বান্দরবান: পার্বত্য জেলা বান্দরবানে শুরু হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্নিমা (মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ)। ধর্মীয় ও সামাজিক এই উৎসবকে ঘিরে আনন্দ উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে।
প্রবারণা পূর্নিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। আষাঢ়ী পূর্নিমার পরের দিন থেকে টানা তিনমাসের বর্ষাবাস শেষে বৌদ্ধ নর-নারীরা বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে পঞ্চশীল, অষ্টশীল ও দশশীল গ্রহন করেন এবং প্রবারণা পূর্ণিমা (মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ) পালন করে থাকে। এসময় সকল অহিংসা ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মন্ত্রে দীক্ষিত হন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মানুসারীরা।
প্রবারণা পুর্ণিমা পালন উপলক্ষে সকাল থেকে বান্দরবানের বিভিন্ন বিহারে বিহারে চলছে ধর্মীয় প্রার্থনা। ভিক্ষুদের উদ্দেশ্যে অর্থ ও অন্নদান আর ফুল পূজাসহ চলছে নানা ধর্মীয় আনুষ্টানিকতা। আর বিভিন্ন উপাসক-উপাসিকারা গ্রহণ করছে অষ্টশীল ও দশশীল।
এসময় শীল ও দেশনা প্রদান করেন উজানীপাড়া রাজগুরু মহা বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ড. সুবন্নলংকারা মহাথের।
বিহারে বিহারে চলছে ধর্মীয় দেশনা ও জগতের সকল প্রানীর মঙ্গল কামনায় করা হচ্ছে বিশেষ প্রার্থনা। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা বিভিন্ন বিহারে বিহারে উপস্থিত হয়ে সুখ:শান্তি লাভ ও পারিবারিক সুস্থতার জন্য প্রার্থনায় জড়ো হচ্ছে। দায়ক-দায়িকারা মোমবাতি, ধুপকাটি প্রজ্জলন আর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ছোয়াইং (বিভিন্ন ধরনের খাবার) প্রদান করে দিনটি পালন করছে মহা আনন্দে।
প্রবারণা পূর্নিমা পালন বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম উৎসব। প্রতি বছর এ দিনটি সকল বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মতে প্রবারণা পুর্ণিমার দিনই রাজকুমার সিদ্ধার্থের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্দি গ্রহণ, গৃহত্যাগ ও ধর্মচক্র প্রবর্তন সংঘটিত হয়েছিল তাই প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে আজ ও।
প্রবারণা পুর্নিমা উৎসব উদযাপন উপলক্ষে সন্ধ্যায় বান্দরবানের পুরাতন রাজবাড়ীর মাঠ থেকে একটি বিশাল রথ টেনে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে বৌদ্ধ বিহারে নিয়ে রাখা হবে। আর এসময় রথ টানার পাশাপাশি, হাজার বাতি প্রজ্জলন, পিঠা উৎসব আর রং বে রংয়ের ফানুষ বাতি আকাশে উড়াবে পূনণার্থীরা।
তিনদিন ব্যাপী নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে সোমবার মধ্যরাতে সাংগু নদীতে রথ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের এই প্রবারণা উৎসবের।