বাসুদেব বিশ্বাস,বান্দরবান: মানবতামুলক বিভিন্ন কর্মকান্ড করে ইতিমধ্যে বান্দরবানের সাধারণ জনগণের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়ে ওঠেছে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি।
সোমবার (২৬ জুন) দুপুরে বান্দরবানের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনে আবারোও এক রিকশা চালককে একটি রিকশা উপহার দিয়ে সাধারণ জনগনের কাছে প্রশসিংত হয়েছেন জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ।
এসময় শ্রীমন্ত দাশ নামে এক অসহায় যুবককে একটি রিকশা প্রদান করা হয় এবং সেই রিকশা চালিয়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে তার পরিবারকে ভালোভাবে পরিচালনার জন্য শ্রীমন্ত দাশকে নিদের্শনা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক। এসময় জেলা প্রশাসক বিপদে পড়লেও যেন রিকশাটি বিক্রি না করে এবং সঠিকভাবে সেটি সংরক্ষণ ও মেরামত করে রাখে এই অনুরোধ করে।
সুত্রে জানা যায়, বান্দরবান সদরের ৬নং ওয়ার্ডের স্টেডিয়াম এলাকায় একটি ভাড়া করা বাসায় থাকেন রিকশাচালক শ্রীমন্ত দাশ। জীবনের ২০টি বছর ধরে দুই চাকার প্যাডেল চেপে রিকশা চালিয়ে পরিবারের ভরণ পোষণ করে যাচ্ছেন শ্রীমন্ত। প্রতিদিন একশ টাকায় গ্যারেজ থেকে রিকশা ভাড়া নিয়ে চারশ থেকে পাঁচশ টাকার বেশি উপার্জন কখনোই হতো না, মাস শেষে বাড়িওয়ালাকে দিতে হয় ৪ হাজার টাকা। ২ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তানের জনক এই মানুষটিকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য পরিবারে উপার্জনক্ষম দ্বিতীয় আর কোন ব্যক্তি নেই। শ্রীমন্ত দাশের বাবা মারা গেছে বহুদিন হয় আর মায়ের ভরণপোষন ও চিকিৎসা খরচসহ সব মিলিয়ে অসহায় রিকশাচালক শ্রীমন্তের কষ্টে দিন চলে।
সর্বশেষ একটি রিকশা পাওয়া জন্য শ্রীমন্ত জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করলে অসহায় এই মানুষটির পাশে দাঁড়িয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। আর জেলা প্রশাসকের নিদের্শনায় সুন্দর একটি রিকশা তৈরি করে শ্রীমন্ত দাশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
এদিকে দীর্ঘদিন পর জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে বিনামুল্যে একটি রিকশা পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে কেঁদে দেয় শ্রীমন্ত দাশ আর জেলা প্রশাসককে দোয়া করার পাশাপাশি এই রিকশা নিয়ে নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্নের কথা জানায় শ্রীমন্ত।
এসময় আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মো.শফিকুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার বিশ্বাস, রিকশা চালক শ্রীমন্ত দাশ সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, আর্থিক সাহায্য কখনোই টেকসই হয় না, কারণ দু চারদিনের মধ্যেই এ টাকা শেষ হয়ে গেলে তাকে আবার অসহায় দিনাতিপাত করতে হয়, এ জন্যই শুরু থেকেই সমাজের প্রান্তিক মানুষগুলোকে যেনো কখনো পরমুখাপেক্ষী হয়ে জীবনধারণ করতে না হয় সেজন্য তাদের স্থায়ী কর্মসংস্থানের দিকেই সবাইকে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, গরীব ও অসহায়দের দীর্ঘমেয়াদী যেটি ভালো হয় সেটি করাই আমার লক্ষ্য থাকে প্রতিবার আর সমাজের উন্নয়নের জন্য আমার এই কর্মকান্ড চলমান থাকবে।
প্রসঙ্গত : ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বান্দরবানের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই এই পর্যন্ত দুস্থ ও অসহায়দের সেবায় নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন এবং এইপর্যন্ত ৭জন অসহায়কে ১টি করে রিকশা, ২জনকে ২টি ভ্যান গাড়ী এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষার জন্য শিক্ষা সামগ্রী প্রদান সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন।