বাজেট অর্থপাচারকারীদের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য নয় এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পাচার করা অর্থ ফেরাতে দায়মুক্তিই’ প্রমাণ করে প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ মানুষের জন্য নয়।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাজেটে কাদেরকে সাহায্য করেছে? যারা টাকা চুরি করল, ডাকাতি করল, লুণ্ঠন করল এবং লুণ্ঠন করে বিদেশে টাকা পাচার করল পিকে হালদারের মতো লোকদের। তারা এখন ৭% ট্যাক্স দিলে বিদেশ থেকে টাকা ফেরত আনতে পারবে এবং এর বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। তাদেরকে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) ধরবে না, হাইকোর্ট থেকেও তাদেরকে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।’
‘তাহলে আমি কী বলব? যারা এই বাজেট দিয়েছে তারা কি সাধারণ মানুষের সরকার, এটা কি সাধারণ মানুষের জন্য বাজেট? যারা লুটেরা, চোর-ডাকাত- এটা তাদের সরকার। আজকে এরা (সরকার) মানুষের পকেট কেটে নিজেদের পকেট ভারি করে এদেশের অর্থনীতিকে এদেশের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের এই সরকার একটা অনির্বাচিত সরকার। জনগণের বাজেট দেওয়ার তাদের কোনো এখতিয়ার নেই। তাদের গত ১৪-১৫ বছরের যে দুঃশাসন, এই দুঃশাসনে তারা প্রমাণ করেছে তারা বাংলাদেশের মানুষের শত্রু, এরা এখন জনগণের শত্রু। আমি যদি বলি এরা এখন গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।’
‘আওয়ামী লীগ, এই সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বাজেট নিয়ে আমরা অতকিছু বুঝি না। সাধারণ মানুষ আমরা দেখি যে, কোন জিনিসের দাম বাড়ল, কোন জিনিসের দাম কমল। বাস ভাড়া বাড়ল কি না। আজকে বাসে উঠেন বাসের ভাড়া বেড়ে গেছে। গ্যাসের দাম বাড়ার ফলে চুলার খরচ বেড়ে গেছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে সারের দাম বৃদ্ধি পাবে, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়বে। এদেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এতটুকু বৃদ্ধি পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘বাজেটে দেখবেন সবচেয়ে বেশি বরাদ্ধ কোথায় দেওয়া হয়েছে- জনপ্রশাসনে। জনপ্রশাসন কী? জনপ্রশাসন হচ্ছে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, ডিসি-ইউএনও। সেক্রেটারি-টেক্রেটারি-এরা যারা বসে আছেন সচিবালয়ে। ওদের বেতন বাড়াচ্ছে, ওদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়াচ্ছে। আর তাদের জন্য জনগণের পকেট থেকে টাকা কেটে তাদের এটা (বেতন-ভাতা) বাড়াচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘মানুষের জন্য এদের কোনো ভালোবাসা নেই। তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য কী করে অর্থ সাশ্রয় হতে পারে তার জন্য তারা কাজ করত। আজকে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ফলে কী হয়েছে? শতকরা ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গেছে অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে ৪২ জন হচ্ছে দরিদ্র। সেই মানুষের জন্য এই বাজেটে বলেন বা আগের বাজেটগুলোতে বলেন কখনো আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি।এক কোটি লোককে তারা নাকি সহযোগিতা দেবে। সেই ১ কোটি লোক কোনো ছিটা-ফুটোও পায় না, ওখান থেকে আবার আওয়ামী লীগ ভাগ বসায়…।’
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির বরকতউল্লাহ বুলু, আমানউল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, তাবিথ আউয়াল, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, যুবদলের মামুন হাসান, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশে হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, শামীমুর রহমান শামীম, মীর নেওয়াজ আলীসহ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।