মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পরকীয়া করতে গিয়ে বাক্সের মধ্যে থেকে প্রেমিককে আটক করেছে জনতা। অচেতন অবস্থায় বিজয় বাউরী (৩০) নামে (ওই নারীর) স্বামীকে উদ্ধার করলে পরে তিনি মারা যান।
পুলিশ ঘটনা জানতে পেরে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ঘটনাস্থল থেকে প্রেমিক যুগলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মৌলভীবাজার মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ফুলবাড়ী চা বাগানে নতুন লাইনের জিলপাড়া নামক এলাকায়।
নিহতের মা যমুনা বাউরী অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে বিজয় বাউরীর সঙ্গে জুড়ি উপজেলার সোনারুপা চা বাগানের মতি বাউরীর মেয়ে অষ্টমী বাউরীর (২৮) ১০ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। তাদের সংসারে রূপালী (৭) ও লাভনী বাউরী (৪) নামে দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। কয়েক বছর তাদের সংসার সুখে চললেও কয়েক মাস পূর্বে প্রতিবেশী চাঁন মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়াকে (৩৫) বাড়ির সামনে দোকান ভাড়া দিলে তার কুদৃষ্টি পড়ে আমার ছেলের সংসারে।
বুধবার দিবাগত রাত ১০টায় প্রতিদিনের মতো রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়ে সবাই। রাত ২টার দিকে লোকজনের চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙলে দেখি লোকজন আমার ছেলের ঘর ঘিরে রেখেছে। জিজ্ঞেস করলে লোকজন জানান, আমার ছেলের ঘরে প্রতিবেশী সেলিম ঢুকেছে। পরে ঘরের মধ্যে থাকা ড্রেসিং টেবিলের তালাবদ্ধ বাক্সের ভেতর থেকে সেলিম মিয়াকে আটক করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় যুবক বিশ্বজিৎ বাউরী, বুদু, চন্দন দাস, মনা মিয়া,সোহেল মিয়া,সুমন ও সুচিত্রসহ এলাকাবাসী জানান, চাঁন মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া একজন লম্পট প্রকৃতির লোক। তার কারণে এলাকায় একাধিক সংসার ভেঙেছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। বুধবার দিবাগত রাতে স্থানীয় বিজয় বাউরীর বসত ঘরের পেছনের জানালা দিয়ে সেলিমকে প্রবেশ করতে স্থানীয় এক যুবক দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের জানালে তারা বিজয় বাউরীর ঘর ঘিরে রাখেন।
ভোরে উপস্থিত জনতা বাড়ির লোকজনকে ডেকে বিজয়ের ঘরের দরজা খুলে তল্লাশি করে সেলিমকে পাওয়া যায়নি। পরে জনতার জেরার মুখে অষ্টমী বাউরী ড্রেসিং টেবিলের বাক্সের ভেতর থেকে তালা খুলে সেলিম মিয়াকে বের করে দেয়। এ সময় বিজয় বাউরীকে অচেতন অবস্থায় মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া ঘর তল্লাশির সময় অষ্টমী বাউরীর শয়ন কক্ষ থেকে ৪টি ঘুমের বড়ি এপিক্লোন-২ ও ৪টি সিনারন প্লাস ট্যাবলেটের খালি খোসা পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, সেলিম ও অষ্টমী তাদের প্রেমলীলা নিরাপদভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য হয়তো বিজয়কে রাতে অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খাইয়ে প্রেমিক সেলিমকে ঘরে ঢুকিয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত সেলিমের প্রতিবেশী ভুক্তভোগী শান্তনা গঞ্জু অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সেলিম আমাকে কুপ্রস্তাব দেয়। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় সে একাধিকবার আমার ঘরের জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকার চেষ্টা করে। আমি তার ভয়ে পরবর্তীতে মানসম্মান রক্ষার্থে দ্বিতীয় বিয়ে করি। এ ধরনের লম্পটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ফুলবাড়ী বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি মনুরঞ্জন পাল বলেন, এর পূর্বে সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগে একাধিক সালিশ বৈঠকে ক্ষমা চেয়ে পার পেলেও তার চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি।
কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রেমিক যুগলকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে বুঝা যাবে বিজয় বাউরী কীভাবে মারা গেছেন।