করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ সহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষকদের গবেষণায় এমন ঝুঁকির কথা উঠে এসেছে। বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে লড়াই করছে, যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড পরিমাণ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটছে, তখন ‘ব্রেন, বিহ্যাভিয়ার, এন্ড ইমিউনিটি’ জার্নালে নতুন একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ফুটে উঠেছে কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার মতো হতাশাজনক এক প্রবণতার কথা।
এমন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ, ভারত, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও বৃটেনের মতো দেশে। অনলাইন সাইকোলজি টুডে’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে লেখকরা আত্মহত্যা প্রবণতার জন্য চারটি বড় ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো এরকম: সামাজিক দূরত্ব ও আইসোলেশন কোভিড-১৯ সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে এক ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
তাতে মানুষের মারাত্মক ইমোশনাল হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে আইসোলেশন অনেককে হতাশ করে তুলছে। এমনও হচ্ছে যে, মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যাকে আরো তীব্র করে তুলছে। বাড়ছে হতাশা। আত্মহত্যার মানসিকতা। এক্ষেত্রে লেখকরা ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও বৃটেনের করোনা সংক্রমণের বিস্তারিত নিয়ে গবেষণা করেছেন, যেখানে কোভিড-১৯ এর কারণে আইসোলেশনে থাকা মানুষের আত্মহত্যায় ভূমিকা রেখে থাকতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া চীনা একজন ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন। করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এমন সন্দেহে ওই ছাত্রকে হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল।
লকডাউন থেকে অর্থনৈতিক মন্দা
কোভিড-১৯ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে। এর ফলে বেকার হয়ে পড়া মানুষ এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে হতাশার কারণে অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে থাকতে পারে। গবেষণাপত্রের লেখকরা যুক্তি দিয়েছেন যে, অনিশ্চয়তা, অসহায়ত্ব বোধ এবং মূল্যহীন হয়ে পড়ার মতো অনুভূতি আত্মহত্যার হারকে বৃদ্ধি করে থাকতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, মার্চের শেষের দিকে জার্মানির অর্থমন্ত্রী ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে আত্মহত্যা করেছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়ে তিনি ভীষণ হতাশায় ছিলেন।
স্বাস্থ্যকর্মীদের হতাশা ও মানসিক আঘাত
করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন তথ্যপ্রমাণ আছে। তাদের এসব ঝুঁকির ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে রয়েছে অতিমাত্রায় হতাশা, অসুস্থ হয়ে পড়ার আতঙ্ক, অসহায়ত্ব বোধ, একাকি রোগীদের মারা যাওয়া দেখতে দেখতে মানসিক ক্ষত। ওই গবেষণাপত্রের লেখকরা যুক্তি দিয়েছেন যে, এসব কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে লন্ডনের একটি হাসপাতালের আইসিইউয়ের একজন নার্স আত্মহত্যা করেছেন। তিনি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের দেখাশোনা করছিলেন। তার সামনে ৮ জন এমন রোগী মারা যাওয়ার পর তিনি আত্মহত্যা করেন।
মর্যাদাহানী ও বৈষম্য
গবেষণাপত্রের লেখকরা যুক্তি দিয়েছেন যে কোভিড-১৯ এর কারণে অশোভন আচরণের শিকার হয়ে থাকেন রোগীরা। এ কারণে বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়তে পারে। উদাহরণ হিসেবে ভারতে সন্দেহজনক একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সামাজিক বর্জনের মুখে পড়েছিলেন। তাকে ধর্মীয়ভাবে বৈষম্যের মুখে পড়তে হয়েছিল। এরপর তিনি আত্মহত্যা করেন। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার পর এক ব্যক্তিকে আইসোলেশন করে রাখে প্রতিবেশীরা। এরপর তিনি আত্মহত্যা করেন।