
অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সই করেছে বাংলাদেশ ও ভুটান। আজ রোববার সকালে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ভুটানের অর্থ বাণিজ্যমন্ত্রী লোকনাথ শর্মা। এ সময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘পিটিএ আমাদের দুদেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করতে ভূমিকা রাখবে। সেক্ষেত্রে পরবর্তী ৫০ বছর আমাদের অঞ্চলের নাগরিকদের টেকসই উন্নয়ন এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ প্রত্যক্ষ করবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভূটান সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে উভয় প্রধানমন্ত্রী একযোগে একটি লোগো উম্মোচন করেন এবং পৃথক কেক কাটেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, ভুটান প্রান্তে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী টান্ডি দর্জিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভুটানের ঐতিহাসিক ও বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে এই চুক্তির মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের আরও উন্নতি এবং ব্যবসা বাণিজ্যসহ পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
পিটিএ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখন সময় এসেছে যে আমরা পারস্পরিক সুবিধার জন্য এবং আমাদের নাগরিকদের সামগ্রিক উন্নতি ও কল্যাণের জন্য আমাদের অসাধারণ সম্পর্ককে আরও বেশি অর্থবহ করে তুলি। এই চেতনায় আমরা আজ ভূটানের সঙ্গে পিটিএতে স্বাক্ষর করেছি। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ এবং ভূটান থেকে বিস্তৃত পণ্য একে অপরের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। চুক্তিতে পারস্পরিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত তালিকা অন্তর্ভুক্ত করারও বিধান রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কেননা আমরা বিশ্বের কোন দেশের সঙ্গে আমাদের প্রথম পিটিএ স্বাক্ষর করছি। আর ভূটানই প্রথম দেশ যেটি একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কেননা আমরা বিশ্বের যে কোনো দেশের সঙ্গে আমাদের প্রথম পিটিএ স্বাক্ষর করছি। আর ভূটানই প্রথম দেশ যা একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরে একটি সার্বভৌম এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই দিনে আমরা ভুটানের কাছ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি লাভের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভূটান সম্পর্ক উদযাপন করতে যাচ্ছি। এই বছরটি আশীর্বাদযুক্ত, কেননা আমরা আমাদের জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছি এবং জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক-এর ও ৪০তম জন্মবার্ষিকী।’
এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টান্ডি দরজি এবং অর্থমন্ত্রী লিয়নপো লোকনাথ শর্মা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভোম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ভুটানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির এই দিনটিকেই শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দুই দেশ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের দিন হিসেবে বেছে নেয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই চুক্তির ফলে ভুটান তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য এবং ইলেকট্রনিক্সসহ ১০০টি বিভিন্ন বাংলাদেশী পণ্য রফতানিতে শুল্ক সুবিধা প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। অন্যদিকে, ফলমূলসহ ৩৪ টি ভূটানের পণ্য বাংলাদেশে একই সুবিধা পাবে। পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে আরও পণ্য দু’দেশের তালিকায় সংযুক্ত করা হবে। এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের যাত্রা শুরু হবে।