ভারতকে এন্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভিরের ৪ লাখ ৫০ হাজার ডোজ দিতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জায়ান্ট ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জিলেড সায়েন্সেস। তবে এর বাইরে বাংলাদেশসহ কমপক্ষে চারটি দেশ থেকে এই ওষুধ কেনার জন্য চেষ্টা করছে ভারত সরকার। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, মিশর, উজবেকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। সরকারি সূত্র বলেছেন, এসব দেশে ভারতীয় মিশনগুলো রেমডেসিভির কেনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভারতে এই ওষুধটির রয়েছে উচ্চ চাহিদা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এই ওষুধটি উৎপাদন করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এতে আরো বলা হয়, ভারত বর্তমানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে এক সঙ্কটময় অবস্থায় রয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এ অবস্থায় সেখানে এন্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভিরের মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে এ মাসের শুরুর দিকে রেমডেসিভির আমদানির ওপর থেকে শুল্ক কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। একই সঙ্গে এই ওষুধ ভারতে উৎপাদনের জন্য যেসব কাঁচামাল প্রয়োজন তা আমদানির ওপরও শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। রাজধানী নয়া দিল্লিতে সরকারি সূত্রগুলো বলছেন, জিলেড সায়েন্সেস যে ৪ লাখ ৫০ হাজার ডোজ রেমডেসিভির দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে এই ওষুধ উৎপাদনের জন্য যেসব কাঁচামাল সরবরাহের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে তাকে একটি কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অক্সিজেন সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে ভারতে এসে পৌঁছার কথা। আগেভাগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোভিড-১৯ টিকা পেতে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি ভারত- এমন সমালোচনা আছে। কিন্তু সূত্রগুলো এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত ‘রেডি-টু-ইউজ’ জাতীয় টিকা চায়নি। সূত্রগুলো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভারত যে পরিমাণ টিকা সরবরাহ দিয়েছে তার দ্বিগুণ চাহিদা রয়েছে ভারতের ভিতরেই। নিজস্ব টিকাদান কর্মসূচি ত্বরান্বিত করতে ভারত এস্ট্রাজেনেকার এক কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার আশা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এর চেয়ে অনেক বেশি এস্ট্রাজেনেকার টিকা আছে। এ ছাড়া ৫ কোটি ডোজ সেখানে উৎপাদনের অধীনে রয়েছে। ভারত প্রত্যাশা করছে, যুক্তরাষ্ট্র কোভিশিল্ড টিকা উৎপাদনের প্রয়োজনীয় ফিল্টার সরবরাহ অনুমোদন দেবে।
সরকারি সূত্রগুলো পরিষ্কার করে বলেছেন, দান হিসেবে এই সহায়তাকে প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছে না ভারত। তবে ভারত সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য এখনও কোনো আবেদন করেনি। সূত্রগুলো আরো বলছেন, এক্ষেত্রে মূল এজেন্ডা হলো অক্সিজেন উৎপাদনের প্লান্ট এবং কনসেনট্রেটর স্থাপনের মতো বিশেষায়িত সরঞ্জাম বিদেশ থেকে কেনা। এগুলো ব্যবহার করে দেশে অক্সিজেনের যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে তা সমাধানে সহায়ক হবে। এমনকি রেমডেসিভির ওষুধের মতো ওষুধ উৎপাদনও সহজ হবে। এমন সরঞ্জাম কেনার একটি তালিকা এরই মধ্যে ভারতীয় মিশনগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সাধারণত ‘এইড’ বা সহায়তা নিয়ে থাকে। ওদিকে সুইজারল্যান্ডের মতো দেশ অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জাম সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে। এসব জিনিস ভারতের রেডক্রস সোসাইটির মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।
বেসরকারি খাত থেকে সহায়তা হিসেবে ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরাম (ইউএসআইএসপিএফ) বলেছে, তারা ভারতে অক্সিজেন পাঠানোর চেষ্টা করছে। আকাশপথে ভারতে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠানোর কথা তাদের।