বাংলা এক্সপ্রেস ডেস্কঃ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর পর যে এলাকাটি খবরের শিরোনামে জায়গা করে নেয়, সেটি ছিল মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা।
ইতালি, গ্রিস, স্পেন, জার্মানিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে প্রায় সাতশো’র মতো প্রবাসী বাংলাদেশি ফিরে এসেছিলেন, যখন ইউরোপে করোভাইরাস ছড়িয়ে পড়া শুরু করে।
মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ স্বাস্থ্য বিভাগ যখন বাংলাদেশে ১৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত করে, তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন যে আক্রান্তদের অধিকাংশই ফরিদপুর, মাদারীপুর এবং শিবচর এলাকার।
পরে জানা যায় ওই ১৭ জনের মধ্যে আট জনই ছিলেন শিবচর উপজেলার।
বৃহত্তর ফরিদপুরের এসব এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ ইতালিতে কর্মরত, এবং সেখানে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে তাদের অনেকেই দেশে ফিরতে শুরু করেন ফেব্রুয়ারির শেষের দিকেই।
এরপর ৮ই মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্তের পর ১৩ই মার্চ প্রথম শিবচর পৌরসভা এলাকায় বিদেশ ফেরত এক ব্যক্তির দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয় বলে জানাচ্ছেন সেখানকার কর্মকর্তারা।
পরে তার স্ত্রী এবং সন্তানও কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়। এরপর শনাক্ত হন তার শাশুড়ি ও এক বন্ধু। এরপর আরও কিছু এলাকায় আক্রান্তের শনাক্ত হওয়া ও ব্যাপক সংখ্যায় প্রবাসীদের আসার কারণে ১৯শে মার্চ দেশের প্রথম এলাকা হিসেবে শিবচরকে লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসন।
তবে এর আগে ১৮ই মার্চ জানানো, করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শিবচরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ওইসময় দ্রুততার সঙ্গে লকডাউন ঘোষণা ও কার্যকর করার কারণেই উপজেলায় ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ ঠেকানো গেছে।
“দেখুন দেশে যখন ১৭ জন আক্রান্ত ছিলো, তখন শিবচরেই ছিলো আট জন। আর এখন দেশের অন্য এলাকার অবস্থা দেখুন। সেখানে শিবচরে এ পর্যন্ত ২৪ জন শনাক্ত হয়েছে। আমরা লকডাউন করে এবং প্রয়োজনে বিশেষায়িত লকডাউনের মাধ্যমে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঠেকাতে পেরেছি”।
মি. আসাদুজ্জামান বলেন, পরে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ব্যক্তিও ছিলেন, কিন্তু তাদের থেকে অন্যদের মধ্যে ছড়ানো বন্ধ করা গেছে।
শিবচরের স্থানীয় ব্যাংকে এমন ভিড় লেগেই থাকে
এখনকার পরিস্থিতি কেমন?
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, সরকারি সিদ্ধান্তে বাজার ও দোকানপাট সীমিত পরিসরে খুললেও ভলান্টিয়ারদের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “তবে এটা খুব কঠিন কাজ। বাজারে এসে লোকজন দূরত্ব বজায় রাখবে, এটা নিশ্চিত করা সত্যিই কঠিন। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি। কাঁচাবাজারগুলোতে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে।
“মাস্ক ছাড়া কোনো দোকানদারকে পণ্য বিক্রি না করতে বলা হয়েছে। ক্রেতাদের স্যানিটাইজার দেয়ার জন্য বলেছি। বড় দোকানগুলো শুরু করেছে। কিন্তু এটা সত্যিই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ”।
শিবচর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ শামসুদ্দিন খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত লকডাউন চলার পর কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।
“তবে আমরা চেষ্টা করছি নিয়ম মাফিক মানুষ যেন চলে সেটা নিশ্চিত করতে। বাজারগুলো ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে মানুষের কথা বিবেচনা করে। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মাছ ও কাঁচাবাজার খোলা থাকবে। এরপর অন্য মার্কেট খুলবে ও ৪টা পর্যন্ত চলবে”।
তিনি বলেন, প্রথমে যতটা সংক্রমণের আশঙ্কা করা হয়েছিলো, তা ঠেকানো গেছে। যখনই যার মধ্যে উপসর্গ দেখা গেছে, সঙ্গে সঙ্গে তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক সহায়তা দিয়ে।
“এখন আর কয়েকটি বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে কয়েকজনকে। দু’একদিনের মধ্যে তাদের নমুনা পরীক্ষার ফল আসবে”।
লকডাউন শিথিলের পর বাজারের বর্তমান অবস্থা
তবে স্থানীয় একজন সাংবাদিক বলছেন, লকডাউন ঢিলেঢালা হওয়ার পর বিধিনিষেধ আর লোকজন কার্যত মানছে না।
তিনি বলেন, “মার্কেট খুলে দিয়েছে ঈদকে সামনে রেখে। কাপড়ের দোকানগুলো অনেক ভিড়। ব্যাংকগুলোতে ঠাসাঠাসি করে লোকজন অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শুধু অন্য এলাকা থেকে ঢুকতে গেলে কিছুটা বাধা পেতে হয়।
“কার্যত লকডাউন বলতে যা বোঝায়, তা আর নেই শিবচরে”।
ওই সংবাদকর্মী বলেন, প্রথম দিকে মানুষ লকডাউনসহ অন্য বিধিনিষেধ মেনে চলছিলো, যার ইতিবাচক ফলাফল দেখা গিয়েছিল।
তিনি বলেন, “তখন একটা ভীতি কাজ করছিলো। কিছুদিন যাওয়ার পর রোগী নাই খবর প্রচার হওয়ার পর ভীতি কমে যায়। এরপর মানুষজন বেরুতে শুরু করে। এরপর আবার কয়েকজন রোগী পাওয়া যায়”।
এমনটি উমেদপুর ইউনিয়নে গত পরশু একজনকে করোনাভাইরাস বহনকারী হিসেবে শনাক্তের পর প্রশাসনের কর্মকর্তারা গিয়ে তার বাড়ী লকডাউন করলেও এলাকাবাসী বিষযটিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেও খবর পাওয়া গেছে।
উৎসঃ বিবিসি বাংলা