এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সেলিমুল হক চৌধুরীকে একদল দুর্বৃত্ত ন্যাক্কারজনক ভাবে হামলা করে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে অপদস্ত করায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টির পাশাপাশি সর্বত্র রিন্দার ঝড় উঠেছে। বিলম্বে প্রকাশিক তথ্যে জানা যায়, নিন্দনীয় এ ঘটনায় মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী চিহ্নিত কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেছে।
১৮ জানুয়ারি’২২ ইং মঙ্গলবার রাতে বাঁশখালী পৌরসভার মিয়ারবাজার এলাকায় যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীর বাড়িতে বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী ঐ নেত্রীর পারিবারিক আমন্ত্রনে দাওয়াত খেতে গেলে পুর্ব থেকে উৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তার উপর অতর্কিতে ন্যাক্কারজনক এ হামলা করার অভিযোগে ১৯ তারিখ বুধবার বিকালে সেলিমুল হক চৌধুরী নিজে বাদী হয়ে বাঁশখালী থানায় মামলা করার পর ঘটনাটি জনসমক্ষে প্রকাশিত হলে সর্বত্র আলোচনার ঝড় উঠে। অভিযোগকারী মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী তার উপর হামলার এ ঘটনাকে পুর্ব পরিকল্পিত বলে ইঙ্গিত করেছেন।
মেয়র শেখ সেলিমের উপর হামলার একটি ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ভাইর্যাল হয়ে পড়লে সর্বত্র আলোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠে। শেখ সেলিম দীর্ঘ দিন ধরে বাঁশখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাঁশখালী পৌরসভা মেয়র। অবশ্য গত ১৬ জানুয়ারী২২ ইং বাঁশখালী পৌর নির্বাচনে শেখ সেলিমকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। নব নির্বাচিত মেয়রের সরকারী গ্যাজেটের ভিত্তিতে দায়িত্ব গ্রহনের সাথে সাথে হামলার শিকার বর্তমান মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী পৌর মেয়র থেকে বিদায় নেবেন।
হামলার ব্যাপারে মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরীর কাঁছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাঁশখালী উপজেলার যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হীরা মনির সাথে তাঁর দির্ঘদিনের রাজনৈতিক সখ্যতা। হিরামনি আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত এবং নারী নেত্রি, আমি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র। রাজনৈতিক ও পারিবারিক যে কোন বিষয় আমার সাথে শেয়ার করতেন হিরামনি। আমিও আমার সাধ্য অনুযায়ী পৌর মেয়র হিসেবে তাকে সহয়তা করে এসেছি। তার পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে ভালো সম্পর্ক আছে আমার। তাদের ঘরে ভালো কিছু আয়োজন অথবা কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাত ও দাওয়াত করতো আমি সময় পেলে যেতাম। কিছু কিছু সময় আমি কাজের জন্য যেতে না পারলে সেই আমার পৌরসভা অফিসে আসতো। সেই সুবাদে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর হীরা মনির এক ভাই পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। সে বিষয়ে আলাপ করতেই সে আমাকে দাওয়াত করে তার মিয়ার বাজারের বাসায়। আমি যাওয়ার পর সেখানে হীরা মনির পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত হামিদ ও জামাল নামে আরও দুইজন ছিলেন। হঠাৎ সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে একদল যুবক ওই বাড়িতে গিয়ে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে সিরাজ নামে এক যুবকের নেতৃত্বে চারজন বাড়িতে ঢুকে আমাকে গালিগালাজ করে এবং গায়ে হাত তোলে ও গায়ের জামা কাপড় ধরে টানা-হেঁছড়া করে হেনস্থা করতে থাকে।”
প্রায় ৭৫ বছর বয়সী মেয়র শেখ সেলিম বলেন, “সিরাজ মারমুখী হয়ে বলে, ‘এমপিকে গালিগালাজ কেন করেছ?’ তারপর আমার শার্ট ছিঁড়ে ফেলে নাজেহাল করে। আমি থানার ওসিকে ফোন করলে পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে।আমি বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের কাঁছে দুর্বৃত্তদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
বাঁশখালী থানায় করা মামলায় সিরাজসহ চারজনকে আসামি করেছেন তিনি। বাকিদের মধ্যে দুজনের নাম ইলিয়াস ও মিনার, অন্যজন অজ্ঞাতনামা।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) কামাল উদ্দিন বলেন,মেয়র সাহেব হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করে আমাদের ফোন করার সাথে সাথে পুলিশ পাঠিয়ে উনাকে উদ্ধার করি। মেয়র ওনাকে মারধর-কিলঘুষি মারার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্যঃ মেয়রের উপর ন্যক্কারজনক হামলার ও হেনস্তার ঘটনায় উপজেলার সর্বত্র তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। এ ঘটনাকে বাঁশখালীর রাজনৈতিক মাঠের স্বচ্ছতার ঐতিহ্যকে ভুলুন্ঠিত করে নেতিবাচক ও কলুষিত রাজনীতিক টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে উল্লেখ করছেন পেশাজীবি ও সুশীল সমাজ।