তিমির বনিকঃ ‘বাবা, আমি আর নির্যাতন সহ্য করতে পারছি না, আমাকে উদ্ধার করো, দেশে আনার ব্যবস্থা করো।’সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে ফোন করে বাবার কাছে ওই আকুতি জানানো সেই তরুণী (১৯) আজ শনিবার বাড়িতে ফিরেছেন। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই তরুণী বলেন, দেশে এসেও তাঁর শান্তি নেই। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন দালাল চক্রের লোকজন।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার এক গ্রামের ওই তরুণীকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর গৃহকর্মীর কাজ দিয়ে সৌদিতে পাঠায় ঢাকার আরামবাগ এলাকায় অবস্থিত শান ওভারসিস নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সি। এ বিষয়ে গত রোববার প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেয় মেয়েটির পরিবার।
ওই অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণী তিন দিন আগে রিয়াদ থেকে ইমোতে তাঁর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, তাঁকে সৌদির রিয়াদে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ নির্যাতন তিনি সহ্য করতে পারছেন না। তাঁকে সেখান থেকে যেন উদ্ধার করে আনা হয়। পরে এ তরুণীর পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করেন সৌদিতে পাঠানো দালাল কাশেম মিয়ার সঙ্গে। তিনি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার আমতলী এলাকার বাসিন্দা। কাশেমই ওই তরুণীকে ঢাকার শান ওভারসিসের মাধ্যমে সৌদি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কাশেম এর পর থেকে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে ৫ অক্টোবর প্রথম আলোতে ‘বাবা, আমি আর নির্যাতন সহ্য করতে পারছি না, আমাকে উদ্ধার করো’ এ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় মেয়েটিকে রিয়াদ থেকে উদ্ধার করা হয়। সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাঁকে উদ্ধার করে দেশে পাঠান গতকাল শুক্রবার রাতে। আজ তিনি মাধবপুরে তাঁর বাড়িতে ফেরেন।
ওই তরুণী জানান, শুক্রবার রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পর তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে আনতে বিমানবন্দরে যান। তিনি তাঁদের সঙ্গে বাড়িতে ফেরার সময় দালাল কাশেম মিয়াসহ ৮ থেকে ১০ জন লোক তাঁকে একটি গাড়িতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় বিমানবন্দর পুলিশের সহযোগিতায় তিনি রক্ষা পান। তাঁকে সৌদিতে এক সপ্তাহ একটি ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। যে কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি এখন বিশ্রাম নিতে চান। মেয়েটির বাবা জানান, তাঁর মেয়ে গুরুতর অসুস্থ। যে কারণে আজ দুপুরে তাঁর মেয়েকে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে ওই তরুণীকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত দালাল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অপহরণ নয়, তিনি এ মেয়েকে তাঁর সঙ্গে করে মাধবপুর নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। আরও চেয়েছিলেন ওই মেয়েকে সঙ্গে করে এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে বুঝিয়ে দিতে। কারণ, তাঁকে (কাশেম) নানাভাবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে অযথাই। তিনি দাবি করেন, মেয়েটিকে তিনিই সৌদি আরব থেকে ফেরত আনার ব্যবস্থা করেছেন।