বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ কাজে যোগ দেওয়ার দাবিতে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) খনি শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে তারা বিসিএমসিএলের ফটকে অবস্থান নেন।
বিসিএমসিএল খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় কয়লা উত্তোলনকারী এই প্রতিষ্ঠানের ৭০০’র বেশি শ্রমিক গত ২ বছর ধরে বেকার।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখান গত ১৫ বছর ধরে জীবন বাজি রেখে কয়লা উত্তোলন করে যাচ্ছি। অথচ বেকার হয়ে পড়ায় এখন পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।
খনি শ্রমিক ও বিসিএমসিএল সূত্রে জানা যায়, খনি থেকে কয়লা উত্তোলন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মোট ১ হাজার ১৪০ জন শ্রমিক নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর আরোপিত লকডাউনের মধ্যে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ চুক্তিবদ্ধ চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়াম শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দেয়। পরে ওই বছরের আগস্ট থেকে পুনরায় ৪০০ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হলেও বাকি ৭৪০ জন শ্রমিক বেকার থেকে যান।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের ভাষ্য, এরমধ্যে অনেক দক্ষ খনি শ্রমিক অন্য পেশায় চলে গেছেন। দেশে কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় অনেক সংস্থা এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও বিসিএমসিএল কর্তৃপক্ষ এখনও তাদের কাজে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
এদিকে কোভিড সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে পরবর্তীতে কাজে যোগ দেওয়া ৪০০ শ্রমিককে বাড়ি যেতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানান আন্দোলনরত শ্রমিকরা। তাদের দাবি, বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকদের ৮ মাসের মজুরি বকেয়া পড়েছে।
এই শ্রমিকরাও বকেয়া মজুরি মেটানোসহ বাড়ি ফেরার দাবি জানিয়ে বুধবার থেকে আন্দোলন শুরু করেছেন।
বেকার শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে গত ১০ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এর অংশ হিসেবে তারা বিসিএমসিএল, সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়াম ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে স্মারকলিপি দেন।
এ বিষয়ে খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই সংকটের একটি সমাধান আশা করেছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’
জানতে চাইলে বিসিএমসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘চীনা কোম্পানি এখনো কোভিড বিধিনিষেধ তুলে নেয়নি। শ্রমিকদের কোনো মজুরিও বকেয়া নেই।’
খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে ঈদের দিনেও পরিবার-পরিজন নিয়ে রাস্তায় থাকব।’
উৎসঃ দ্যা ডেইলি স্টার