সম্পর্ক উন্নয়ন এবং দেশের স্বার্থ রক্ষায় অবদানের জন্য দেশি-বিদেশি দু’জন কূটনীতিককে এবারই প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু মেডেল ফর ডিপ্লোম্যাটিক এক্সিলেন্স’ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রবর্তিত বঙ্গবন্ধু পদক পাচ্ছেন মেরিটাইম সচিব রিয়ার এডমিরাল অব. খুরশেদ আলম এবং ঢাকায় দু’বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করে যাওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত সায়িদ মোহাম্মদ আল মেহেরি।
আগামী ২০শে ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেয়া হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থাকবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতি বছর একজন বাংলাদেশি কূটনীতিক এবং বাংলাদেশে কর্মরত একজন বিদেশি কূটনীতিককে ধারাবাহিকভাবে ওই পদক দেয়া হবে। পুরস্কার হিসেবে বিজয়ীদের হাতে দুই ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের মেডেল এবং একটি সাইটেশন তুলে দেয়া হবে। যুদ্ধবন্ধুদের প্রদত্ত স্বর্ণের মেডেলের সোনা চুরির ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু পদকটি অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনে পরীক্ষা করা হয়েছে। অন্যান্য প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
যে অবদানের জন্য এ পদক: সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এডমিরাল অব. খুরশেদ আলমকে ওই পদকের জন্য চূড়ান্তভাবে মানোনীত করা হয়। সমুদ্রসীমা বিরোধী সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালতের মামলায় বাংলাদেশের ডেপুটি এজেন্ট ছিলেন তিনি। বলা হয়- আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়েরের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারকে অনেকটা উৎসাহিত করেছিলেন তিনি। সমুদ্রে বাংলাদেশের দাবি যথাযথভাবে তুলে ধরা অর্থাৎ সমদূরত্বের পরিবর্তে ন্যায্যতার নীতি অবলম্বনের দাবি আদালতে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব উপাত্ত তিনিই প্রস্তুত এবং সরবরাহ করেছিলেন। তাছাড়া বঙ্গোপসাগরে মহীসোপান সংক্রান্ত জরিপ এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আদালতে মহীসোপানের দাবি উপস্থাপন তথা বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রয়েছে তার। মিস্টার আলম বঙ্গবন্ধু প্রণীত টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্টটি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সি-বে অথরিটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত এবং ভারত মহাসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা আইওআরএর চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধু পদক বিজয়ী সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেহেরি ২০১৮ থেকে ২০২০ অবধি বাংলাদেশে ছিলেন। তার আমলে আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ হয়েছে। উল্লেখ্য, তার আগে থেকে একটি ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০২০ এর ভেন্যু নির্বাচনে দুবাইর পক্ষে বাংলাদেশের ভোট প্রদান না করায় দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানো বন্ধ ছিল। রাষ্ট্রদূত মেহেরির আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দফা আমিরাত সফর ছাড়াও আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর সম্ভব হয়। ব্যাক টু ব্যাক ওই সফরে সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎ খাত এবং বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে বিনিয়োগ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই রাষ্ট্রদূতের আমলেই ঢাকা-আবুধাবি প্রথম ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি অনুষ্ঠিত হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় তার আমলে বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনশক্তি রপ্তানির দ্বার পুনরায় উন্মুক্ত হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন এবং পরবর্তীতে ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ মর্মে প্রণীত পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বমঞ্চে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত। সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তারই জন্মশতবার্ষিকীতে ওই পদক প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি, আন্তর্জাতিক আইন ও বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন এবং নির্যাতিত মানুষের ন্যায্য সংগ্রামের প্রতি বঙ্গবন্ধুর সমর্থন নীতি বিশ্ব দরবারে কেবল প্রশংসিতই নয়, এটি প্রতিষ্ঠিতও।