ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি: ফরিদপুর মেডিকেল কলেজকে বর্তমানে বলা চলে দেশের সবচেয়ে সুন্দর, পরিচ্ছন্ন এবং গুছানো মেডিকেল কলেজ। শুধু বাহ্যিক দিক থেকেই যে সৌন্দর্যে ডানা মেলেছে এই ক্যাম্পাস তা নয়; ভিতরগত সকল কার্যক্রমেও এসেছে সুন্দর এবং যুগোপযোগী গতিময়তা যা অচিরেই কলেজটিকে করে তুলেছে দেশসেরা একটি মেডিকেল কলেজে।
ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, হাসপাতালের সেবাগ্রহণকারী, রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক থেকে ফরিদপুরের আপামর জনসাধারণের কাছে ফমেক এখন এই শহরের সবচেয়ে সুন্দর এবং সুচারূভাবে পরিচালিত এক প্রতিষ্ঠান। এর পেছনে যার সবান্ধব উপস্থিতি, যার মেধা-শ্রম-পরিকল্পনা-মননশীল রুচি এবং সর্বোপরি অসাধারণ এক ডাইনামিক ব্যক্তিত্ব কাজ করেছে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। দৃশ্যপট বদলের শুরু তার যোগদানের পরেই। মেডিক্যাল কলেজ গেটের দুপাশে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা এবং প্রতিনিয়ত ফেলা ময়লার স্তুপ ছিল, যা কেবল সৌন্দর্যহানিকর ছিল তা নয়, দুর্গন্ধে ওদিক দিয়ে চলাচল করাটাও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে কষ্ট হয়ে যেতো। বারংবার চেষ্টাতেও এর কোন সুরাহা কেউ করতে পারেনি। কিন্তু বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এর আগমনের পরপরই ভোজবাজির মতন এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ময়লার বিশাল স্তুপের জায়গায় অচিরেই জায়গা করে নেয় বেড়া দেয়া সুশোভিত রঙিন ফুলেল বাগান। মেইন গেইট থেকে ভেতরের গেইট অবধি লাগানো হয়েছে নানারকম গাছ। অডিটোরিয়ামের সামনের খালি জায়গা এখন ক্যাম্পাসের মূল আকর্ষণ। অপূর্ব সুন্দর এক বাগান গড়ে উঠেছে যা এই ইট সিমেন্টের মরুভূমির মাঝে মরুদ্যানের মতন তৃষিত নয়নের তৃষ্ণা জুড়ায়। শীতকাল পুরোটা জুড়ে নয়ানাভিরাম সব সূর্যমুখী ফুলে ছেয়ে ছিল পুরো ক্যাম্পাস। বহিরাগতদের মাঝেও আলোড়ন ফেলে দেয় রাস্তার দুপাশের সূর্যমুখী বাগান, গোল চত্বরে ভিতরে এবং অডিটোরিয়ামের সামনে অবস্থিত গোলাপ ও অন্যান্য বাহারি ফুলের বাগান যা ‘মুজিব পুষ্পকানন’ নামে পরিচিত। এমনই আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলো যে ছুটির দিনে ফমেক যেন হয়ে উঠছিল ফরিদপুরের সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষের অন্যতম আকর্ষণ।
অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে বহিরাগতদের অবাধ চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এনে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন দেখা দেয়। সেব্যাপারেও বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ নিতে কার্পণ্য করেন নি। ক্যাম্পাসের পুকুরে মাছ চাষ করা এবং এর রক্ষণাবেক্ষণে সার্বিক দৃষ্টি রেখে অবশেষে মাছ ধরা এবং ফিশ বার-বি-কিউ উৎসবের আয়োজন। করোনাকালীন ডিপ্রেশনের সময়ে ক্যাম্পাসে থাকা পরীক্ষার্থী এবং ইন্টার্নদের মধ্যে আনন্দ ও স্বতঃস্ফূর্ততা জুগিয়েছিলো অভিনব দৃষ্টান্ত যা তার ব্যক্তিত্বের সুন্দর এক দিক উন্মোচন করে সবার সামনে। এর মাঝে একাডেমিক দিকেও দিয়েছেন সতর্ক এবং সময়োপযোগী নজর। ফাইনাল পরীক্ষার্থীদের বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা, নিরাপদ স্বাস্থ্য সামগ্রী প্রদানসহ সার্বিক দেখাশুনা করা এবং আসন্ন ফাইনাল পরীক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস সম্পন্ন করা, পরবর্তীতে সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে একাডেমিক ভবনে রোগী এনে ব্লক পোস্টিং চালু করার সাহসী সিদ্ধান্ত ও ছিল দেশজুড়ে অন্য সব মেডিক্যাল কলেজের জন্যে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এছাড়া অন্যান্য বর্ষের ছাত্রদের অনলাইন নিয়মিত ক্লাস এবং পরীক্ষাপূর্ব প্রস্তুতি ক্লাসও সম্পন্ন হয়েছে সমানভাবে। করোনাকালে ফমেকে চালু হয়েছিলো করোনা ল্যাব যা এখনো চলমান। করোনা ল্যাবে নিরন্তর পরিশ্রম করা ফ্রন্টলাইনারদেরকে তার নিজ উদ্যোগে সম্মাননা ও কৃতজ্ঞতা স্মারক দেয়াও ছিল অসাধারণ এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। তার উন্নত চিন্তাধারার এক অনন্য নজির। করোনাকালীন সময়ে অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে তিনি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন ফমেকের অন্যতম ঐতিহ্য ‘বিজয় দিবস উদযাপন উৎসব’। স্বল্প সময়ের মাঝে ইন্টার্ন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে নিয়ে নিজে অংশগ্রহণ করে প্রিন্সিপ্যাল এবং ভাইস-প্রিন্সিপ্যাল আয়োজন করেছেন ইতিহাসের অন্যতম সফল এক বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের। মুজিব বর্ষে বিজয় দিবসকে সামনে রেখে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি- বাঙালির মুক্তির কান্ডারি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং অপার ভালোবাসার টানে স্থাপন করেছেন ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’, ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ এবং ‘মুজিব পুষ্পকানন’। এরইমধ্যে ‘ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের’ নাম পরিবর্তন করে জাতির জনকের নামে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ’ করার কথা একাডেমিক কাউন্সিলে সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুজ্জ্বল রাখার এই অসামান্য প্রয়াস এবং বঙ্গবন্ধু কর্ণারের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের জাতির জনক সম্পর্কে জানার অসাধারণ সুযোগ করে দেয়ায় বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে সকল কর্মকর্তাগন।
গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রফ পরীক্ষার রুটিন দেয়া মাত্রই ক্যাম্পাসে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ছাত্রদের আগমন। ছাত্রদের কথা মাথায় রেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি চালু করেন সেন্ট্রাল ডাইনিং। সেইসাথে সকালের নাস্তার জন্যে ছাত্রদের যেন ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে না হয় তার জন্যে স্বাস্থ্যসম্মত নাস্তার ব্যবস্থাও ছিলো চমকলাগানোর মতন। ডাইনিং এ স্থাপন করা হয়েছে ৬৫ ইঞ্চি পর্দা সম্বলিত বিশাল টিভিসেট। সেই সাথে নিরবচ্ছিন্ন ডিশলাইনের আধুনিক সুবিধা। সুপেয় পানির জন্যে আয়রন মুক্ত ফিল্টারকে দীর্ঘস্থায়ী করতে টাইলস এবং উন্নত ফিটিংকল লাগানোর ফলে সার্বক্ষণিক নিরাপদ এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা সহজেই চোখে পড়ে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ছাত্রদের কথা বিবেচনা করে ডাইনিং এর ভেতরে সর্বাধুনিক এবং উন্নতমানের ইলেক্ট্রিক ফিল্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ডাইনিং এ উন্নতমানের অটোবি টেবিল চেয়ারের ব্যাবস্থা খুব সুচারুভাবে সাজানো হয়েছে। এ বিষয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ’ (ফমেক হাসপাতাল) এর শিক্ষক মন্ডলী ও একাধীক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কলেজের অধ্যক্ষ্য ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান স্যার এর আগমনের পরপরই ঘুরে দাড়িয়েছে কর্মচাঞ্চল্যতা, কর্মকর্তা কর্মচারিরা পেয়েছেন আস্থার স্থান। বর্তমানে ফমেক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের পরাশুনার মান বেরেছে। তারা আরো বলেন আমাদের অধ্যক্ষ মহোদয় এই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ’ হাসাপাতালকে দেশের প্রথম সাড়িতে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ইতিমধ্যে হাতে নিয়েছেন। উল্লেখ্য মুজিব শত বার্ষিকীতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ কর্তৃক আয়োজিত “জাতীয় শিশু দিবস” এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের “২৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর” আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ আব্দুর রহমান – প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদপুর-১, কলেজের প্রবীন ও বর্তমান শিক্ষকমন্ডলী, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুহুমূহু করতালি ও জয়বাংলা শ্লোগানের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সভানেত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মোঃ আব্দুর রহমান ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের নতুন নাম “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ” এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন নাম “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল” এর ঘোষণা দেন। এ সময় কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাস জুড়ে এক আনন্দ ঘন পরিবেশ তৈরি হয়। এই আনন্দ সংবাদে অনেককেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা যায়। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শামীম হক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শামসুল হক, ফরিদপুর পৌর মেয়র অমিতাভ বোস এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।