ফ্রান্সে স্থানীয় সরকার (মিউনিসিপ্যাল) নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১২ বাংলাদেশির মধ্যে চার জন বিজয়ী হয়েছেন। রবিবার (২৮ জুন) দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নকারী প্যানেলগুলো নির্বাচিত হয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ফ্রান্সের মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ফ্রান্সের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীগণ মোট কাউন্সিলরের সংখ্যার চেয়ে অধিক সংখ্যক কাউন্সিলর প্যানেল ঘোষণা করে নির্বাচন করেন। ফ্রান্সের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটাররা শুধু মেয়রকেই ভোট দিয়ে থাকেন; অর্থাৎ মেয়র নির্বাচিত হলেই কাউন্সিলরগণ নির্বাচিত হয়ে থাকেন। তবে বিরোধী দল থেকেও ভোটের প্রাপ্ত শতাংশ অনুসারে কাউন্সিলর নিতে হয় মেয়রকে। নির্বাচিত মেয়র তার পূর্ণ প্যানেল ঘোষণার পর অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা নির্বাচিতরা মেয়র ঘোষিত কাউন্সিলের কেউ পদত্যাগ করলে বা মারা গেলে কাউন্সিলর হতে পারবে।
এ বছর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১২ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক। দুই ধাপে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয় গত ১৫ মার্চ। তবে দ্বিতীয় দফায় ২২ মার্চ ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত করে ফরাসি সরকার। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর স্থগিত হওয়া নির্বাচন গত ২৮ জুন রবিবার অনুষ্ঠিত হয় ।
এই নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন প্যানেল থেকে নির্বাচিত হওয়া বাংলাদেশিরা হলেন- শারমিন হক আব্দুল্লাহ, সরুফ ছদিওল, মো. রেজাউল করিম ও রাব্বানী খাঁন। নির্বাচিত বাংলাদেশির মধ্যে শারমিন হক আব্দুল্লাহর নাম কাউন্সিলর হিসেবে চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি তিন জনের প্যানেল বিজয়ী হয়েছে। তবে তাদের নাম শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।
শারমিন হক আব্দুল্লাহ পিয়েরিফিট মিউনিসিপ্যাল থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তার দলের মেয়র মিশেল ফোরকাডের প্যানেল ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ওই এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছে। শারমিন হকের নাম মেয়র ঘোষিত প্যানেলে প্রথম সারিতে থাকায় তার নাম কাউন্সিলর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
সিলেটের জকিগঞ্জের সরুফ ছদিওল সেন্ট ডেনিশ মিউনিসিপ্যালে সোশ্যালিস্ট পার্টি থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তার দলের মেয়র মাতিউ হানাতার প্যানেল ৫৯ দশমিক ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে।
মো. রেজাউল করিম সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার সন্তান। তিনি সেভরান মিউনিসিপ্যাল থেকে নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তার দলের মেয়র স্টিফেন বলসের প্যানেল ৪৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ ভোট পেয়ে সেভরান মিউনিসিপ্যাল থেকে নির্বাচিত হয়েছে।
ঢাকার গাজীপুরের সন্তান এবং ফ্রঁসে আভেক রাব্বানী ইনস্টিটিউটের স্বত্বাধিকারী রাব্বানী খাঁন স্টেইনস মিউনিসিপ্যাল থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তার দলের মেয়র আজেদিন তায়েব ওই এলাকা থেকে প্রথম ধাপেই ৫৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য, যদি কোনও প্যানেল প্রথমবারেই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে যায় সেখানে আর দ্বিতীয়বার নির্বাচন করতে হয় না।
এদিকে ফ্রান্সে মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে ৪ বাংলাদেশি কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশ কমিউনিটিতে আনন্দের বন্যা বইছে। কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি বিজয়ীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।