মনে আছে? বাংলা সিনেমার সেই পরিচিত গল্পের কথা। ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া, এরপর নানা চড়াই-উতরাই শেষে পরিবারকে খুঁজে পাওয়া। নির্ধারিত দৃশ্যপটে এমন কাহিনি অনেকবার দেখা হলেও এবার বাস্তবেও যেন সেই সিনেমার গল্প সামনে এলো। মাত্র ১০ বছর বয়সে হারিয়ে যান ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার বাড্ডা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী। তখনকার কিশোর কুদ্দুস জানতেন না তার বাড়ি কোথায়। শুধু জানতেন, গ্রামের নাম। এরপর কেটে গেছে ৭০ বছর। তবে এর সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ৭০ বছর পর বাড়ির ঠিকানাসহ প্রিয়জনদের খুঁজে পেয়েছেন কুদ্দুস। ফিরেছেন মায়ের কাছে। তবে মাঝে কেটে গেছে ৭০ বছর। সে দিনের কিশোর কুদ্দুস এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধ। প্রায় ছয় যুগ ছেলের অপেক্ষায় থাকা মা মঙ্গলেমা বিবির বয়স ১১০।
হারিয়ে যাওয়ার পর আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বনে যান। শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাফবাদ গ্রামে ঝরনা বেগমের বাড়িতে মা ছেলের দেখা হয়।
হারিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে কুদ্দুস বলেন, ‘আমি আমার চাচার সঙ্গে বাগমারা (রাজশাহী) থানায় বেড়াতে আসি। চাচা ছিলেন থানার দারোগা। তিন দিন চাচার সঙ্গে ছিলাম। সেখানে ভালো লাগছিল না। এ জন্য বেড়াতে বের হয়ে হারিয়ে যাই। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই আত্রাইয়ের সিংসাড়া গ্রামে। ওই গ্রামের সাদেক আলীর বাড়িতে আশ্রয় পাই এবং সেখানেই বড় হই। পরে বাগমারা বারুইপাড়া গ্রামে বিয়ে করে সেখানে সংসার শুরু করি।’
তার স্বজনরা জানান, খোঁজ পাওয়ার পরই মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথাও বলেছেন কুদ্দুস। এত বছর পর নিজের পরিবার খুঁজে পাওয়ায় খুশি কুদ্দুসের স্ত্রী-সন্তানরাও।
কুদ্দুসের চাচাতো ভাইয়ের নাতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১২ এপ্রিল কুদ্দুস মুন্সীর বর্তমান ঠিকানার পাশের গ্রামের (বাগমারা উপজেলার) আইয়ুব আলী নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে তাকে নিয়ে একটি পোস্ট দেন। সেখানে শুধু কুদ্দুসের বাবা-মা ও বাড্ডা গ্রামের নাম ছিল। এরপর আমরা আইয়ুব আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কুদ্দুসকে খুঁজে পাই। কুদ্দুস মুন্সীর ভাগ্নেসহ আমরা চারজন গত ২১ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) তার রাজশাহীর বাড়িতে আসি।’
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘তারা তিন ভাইবোন ছিলেন। তার মায়ের নাম মঙ্গলেমা বিবি। ২১ সেপ্টেম্বর মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন কুদ্দুস।’
কুদ্দুস বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে যখন ভিডিও কলে প্রথম কথা বলি, তখন আমার মা আমাকে বলেন, তুই আমার হারিয়ে যাওয়া কুদ্দুস, বাবা। তোর ছোটবেলায় হাত কেটে গিয়েছিল। মায়ের মুখে এ কথা শোনার পর আমি বলি, মা তোর কুদ্দুসের কোন হাত কেটে গিয়েছিল? তখন মা বলে, বাম হাতের বুড়ো আঙুল কেটে গিয়েছিল। তখন আমি বুঝতে পারি যে তিনিই আমার মা।’
বর্তমানে কুদ্দুসের তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে থাকেন বিদেশে। আর এক ছেলে বাড়িতে আছেন বলে জানান কুদ্দুস।
আইয়ুব আলী বলেন, ‘বারুইপাড়া বাজারের মোড়ে এক চায়ের দোকানে বসে ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলছিলেন আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী। তার গল্পটি মোবাইল ফোনে ধারণ করে গত ১২ এপ্রিল আমার ফেসবুক পেজে আপলোড করি। লিখেছিলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার এই বৃদ্ধ আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার পর মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন।’
বহু মানুষ সেই পোস্টটি শেয়ার করেন জানিয়ে আইয়ুব বলেন, ‘কিছু প্রবাসী আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছেন। তারা দেখেন সেটা। তারপর ওই এলাকার মানুষ ফেসবুকে আব্দুল কুদ্দুসের ভিডিও দেখে যোগাযোগ করেন।’