কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় ফাইজারের ভ্যাকসিনটি ৯০ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করা হলেও তা এশিয়ার দেশগুলোতে কার্যকর হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ থেকে গেছে। ভ্যাকসিনটি মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতার কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে এশিয়ার অনেক দেশ এর সুফল পাবে না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন আশঙ্কার খবর প্রকাশ করেছে।
করোনাভাইরাস মহামারিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকার মধ্যেই এগিয়ে চলেছে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের গবেষণা। বিশ্বজুড়ে ১৪০টিরও বেশি গবেষণার কাজ চললেও ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি চূড়ান্ত পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফাইজার এবং জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োনটেক-এর যৌথভাবে উৎপাদিত ভ্যাকসিন এর একটি।তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার প্রোথমিক ফল বিশ্লেষণ করে সোমবার (৯ নভেম্বর) ফাইজার দাবি করেছে, তাদের ভ্যাকসিনটি ৯০ শতাংশ কার্যকর।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে জেনেটিক উপাদান দিয়ে ভ্যাকসিনটি তৈরি হয়েছে তার জন্য এটিকে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি কিংবা তারও নিচের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। আর সেদিক বিবেচনায় তারা মনে করছেন, এ ভ্যাকসিন সব দেশের মানুষের জন্য জাদুকরী হবে না। বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আফ্রিকার প্রচণ্ড গরম ও দুর্বল অবকাঠামোর দেশগুলোতে মাইনাস ৭০ ডিগির সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ওই ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা কঠিন হবে। এসব দেশের গ্রাম ও দ্বীপ এলাকাগুলোতে ভ্যাকসিন সরবরাহের সময় ‘শীতল শৃঙ্খল’ বজায় রাখা সম্ভব হবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, মহামারি থেকে মুক্ত হতে হলে বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষকে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার তিন পঞ্চমাংশের বসবাস এশিয়া মহাদেশে।
কিছু এশীয় দেশ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন মজুত করার চেয়ে ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার ফাইজারের ব্যবহৃত আরএনএ প্রযুক্তির বিকল্প খুঁজছে। এ প্রযুক্তির ভ্যাকসিনকে অনেক ঠাণ্ডার মধ্যে সংরক্ষণ করতে হয়।
ফিলিপাইনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফ্রান্সিসকো ডুকু রয়টার্সকে বলেন, ‘শীতল শৃঙ্খল বজায় রাখতে হলে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রা প্রয়োজন হবে। সেটা খুব কঠিন। আমাদের এ ধরনের ব্যবস্থা নেই। আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। আপাতত দেখে যাওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। ফাইজারের প্রযুক্তি নতুন। আমাদের এটা নিয়ে অভিজ্ঞতা নেই। সুতরাং ঝুঁকির মাত্রাটা বেশি।’
দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপানের মতো দেশও এ ভ্যাকসিন সংরক্ষণ নিয়ে সন্দিহান। টোকিওর সেন্ট লিউক’স হাসপাতালের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক ব্যবস্থাপক ফিউমি সাকামোতো বলেন, ‘এটি সংরক্ষণ করাটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের।’
অবশ্য আশার বাণীও শুনিয়েছে ফাইজার। রয়টার্সকে তারা জানিয়েছে, ভ্যাকসিন পরিবহন, সংরক্ষণ ও তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণের জন্য লজিস্টিক্যাল পরিকল্পনা করা হয়েছে।