নাটোরের গুরুদাসপুরে ভ্যানচালক আব্দুর রহিম হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূলত, স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের প্রতিবাদ করায় এবং পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় নির্মমভাবে খুন হতে হয় ভ্যানচালক রহিমকে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, নাটোরের গোপিনাথপুর এলাকার নায়েব আলীর ছেলে বিপ্লব হোসেন, একই এলাকার মৃত মকছেদ সরকারের ছেলে হান্নান সরকার ও হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী রায়হান সরকারের ছেলে লিটন সরকার। রায়হানের সাথেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল নিহত রহিমের স্ত্রীর। মালয়েশিয়ায় বসেই এ হত্যার পরিকল্পনা করে সে।
মঙ্গলবার (৩১ মে) বেলা ১২টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোহসীন জানান, গত ২৪ মে রাতে নাটোরের গুরুদাসপুরের নাজিরপুর এলাকায় একটি ভুট্টাক্ষেত থেকে ভ্যানচালক আব্দুর রহিমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে রহিমকে শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পাওয়া যায়। এরপরই অনুসন্ধানে নামে পুলিশের তিনটি বিশেষ টিম।
অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পারে, গুরুদাসপুরের নাজিরপুর গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুর রহিমের স্ত্রীর সাথে পার্শ্ববর্তী গ্রাম গোপীনাথপুরের রায়হান সরকারের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক চলাকালীন ২০১৭ সালে রায়হান ভ্যানচালক রহিমের কাছে তার জমি লিজ রেখে ২ লাখ টাকা নিয়ে মালয়েশিয়ায় যায়। সম্প্রতি লিজের মেয়াদ শেষে ভ্যানচালক আব্দুর রহিম প্রবাসী রায়হানের কাছে বারবার টাকা ফেরত চান। এতে রায়হান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। শেষে পরকীয়া প্রেম এবং টাকা ফেরত চাওয়ার কারণে এক সময় রায়হান ভ্যানচালক রহিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, বিগত চারমাস ধরে রায়হান মালয়েশিয়া থেকেই তার চাচাতো ভাই হান্নান সরকারের সাথে রহিমকে হত্যার পরিকল্পনা চালিয়ে আসছিল। রায়হান বিষয়টি তার ছেলে লিটন সরকারকেও জানায়। পরবর্তীতে রায়হানের নির্দেশে চূড়ান্তভাবে আব্দুর রহিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে হান্নান ও লিটন।
পরিকল্পনা মোতাবেক হান্নান ও লিটন মিলে হত্যায় অংশ নিতে তাদের এলাকার বিপ্লব হোসেনের সাথে ১০ হাজার টাকায় চুক্তি করে। ২৪ মে রাতে তিনজন মিলে ভ্যানচালক আব্দুর রহিমকে সুকৌশলে ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে প্রথমে হান্নান রহিমকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং রহিমের দুই পা চেপে ধরে। বিপ্লব দুই হাত ধরে থাকে। আর লিটন মোটরসাইকেলের ক্লাসের তার রহিমের গলায় পেচিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।
পরে হান্নান মোবাইল করে হত্যার বিষয়টি রায়হানকে জানায়। এ ঘটনায় পরদিন নিহতের ভাই আব্দুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। এরই এক পর্যায়ে সোমবার সকাল ও রাতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়। ভ্যানচালক হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মালয়েশিয়া প্রবাসী রায়হান সরকারকেও আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।