ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের রাজাপুর দেওয়ানকান্দি গ্রামের প্রবাস ফেরত এক দম্পতিকে প্রতিপক্ষের লোকজন মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দাখিলের পর সেই দম্পতিকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে তারা এখন ঘরবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছে পরিবারটি।
অভিযোগ ও ভুক্তভোগী পরিবারটি জানায়, রাজাপুরের দেওয়ানকান্দি গ্রামের শফি শেখ ও সাবিনা আক্তার কাজের জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে ছিলেন। গত কয়েক মাস আগে তারা দেশে ফিরে আসেন। সম্প্রতি পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্থানীয় সেলিম শেখ গংদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জের ধরে গত শনিবার সেলিম শেখ, সাইদুল ও নুরু শেখসহ বিভিন্ন এলাকার ১০ থেকে ১৫ সন্ত্রাসী নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়।
এ সময় হামলাকারীরা শফি শেখ ও তার বাবা আদেল শেখ, ভাই মফিজ শেখ, সাইমন, ভাইয়ের স্ত্রী সুমি বেগমকে ব্যাপক মারধর করে। তাদের মধ্যে দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মারধরের সময় হামলাকারীরা ঘরে ঢুকে স্টিলের বাক্স ভেঙে সেখান থেকে ৫ লাখ টাকা, কয়েক ভরি স্বর্ণ নিয়ে যায়। এ সময় তারা প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এ ঘটনার পর শফি শেখের স্ত্রী সাবিনা আক্তার ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর আরও ক্ষিপ্ত হয় প্রতিপক্ষ। তারা প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সাবিনা আক্তার।
সাবিনা আক্তার জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী কাজের জন্য বিদেশে ছিলেন। কয়েক মাস আগে তারা দেশে এসেছেন। দেশে আসার পর স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে। স্বামীর জায়গায় তারা দোতলা একটি ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। সেই নির্মাণ কাজের টাকা হামলাকারীরা লুট করে নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে ২ ভরি স্বর্ণের গহনাও নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, দিনে ও রাতের বিভিন্ন সময় অচেনা লোকজন বাড়ির সামনে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়। আমি ও আমার স্বামী বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। আমরা এখন ঘরবন্দি হয়ে পড়েছি। তারা হুমকি দিয়ে বলেছে, আমাদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই খুন করা হবে। আমরা এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
বিষয়টি থানা পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে জানানো হয়েছে। হামলাকারীরা প্রভাবশালী বিধায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। আমাদের যেকোনো সময় বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, শফি ও সাবিনাসহ পরিবারের লোকজনকে মারধর করার পর তারা এখন ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। যারা মারধরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা স্থানীয়ভাবে বেশ প্রভাবশালী। ফলে মারধরের সময় ভয়ে আশপাশের কেউই এগিয়ে আসেনি। শফি শেখ ও তার পরিবার একেবারেই অসহায়। ফলে তারা গ্রামে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ফের হামলার ভয়ে তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না।
এদিকে অভিযুক্ত সেলিম শেখ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি ঘটনার বিষয় জানতে আমি তাদের বাড়িতে গেলে তারা আমার ওপর হামলা করে। পরে আমার লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। সেই সময় দুইপক্ষের মাঝে হাতাহাতির কিছু ঘটনা ঘটে। শফি ও তার স্ত্রীকে প্রাণনাশের কোনো হুমকি দেওয়া হয়নি।
অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার এসআই সনাতন দত্ত বলেন, সাক্ষী দেওয়ার জন্য বর্তমানে ফরিদপুরের বাইরে আছি। বিষয়টি কী অবস্থায় আছে তা থানায় আসার পর জানাতে পারব।
(যুগান্তর)