
তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব প্রশ্ন বিদ্ধ হয়ে পড়েছে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ও শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে শ্রমিক নেতারা স্বাক্ষর করেও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার (২২ আগস্ট) সকাল থেকে চা শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিক নেতারা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পঙ্কজ কন্দ সাধারণ শ্রমিকদের হাতে আক্রমনের শিকার হন।
দেশের চা বাগানগুলোতে শ্রম অসন্তোষ নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে রবিবার (২১ আগস্ট) রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের সাথে জেলা প্রশাসকের এক বৈঠক হয়। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাগণ এবং বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে সংগঠনের সহ সভাপতি পঙ্কজ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি, কমল চন্দ্র বুনারজি, মো. শহিদুল ইসলাম, নির্মল দাস পাইনকা সকলের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আসন্ন দুর্গা পূজার আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে চা শ্রমিক নেতাদের ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হওয়ার শর্তে পূর্বের মজুরি ১২০ টাকা রেখেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিতে সম্মত হন চা শ্রমিক নেতারা। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা বৈঠক শেষে এ সংক্রান্ত একটি যৌথ বিবৃতিতে শ্রমিক নেতারা স্বাক্ষরও করেছিলেন।
সোমবার (২২ আগস্ট) শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া, কাকিয়াছড়া, রাজঘাট, কালিঘাট সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ চা বাগানের শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেননি। তারা বাগানে বাগানে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।
ভাড়াউড়া চা বাগানে সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন। এই খবর পেয়ে দুপুরে ফুলছড়া ও কালিঘাট চা বাগান থেকে হাজারখানেক শ্রমিক মিছিল নিয়ে ভাড়াউড়া চা বাগানে রওয়ানা দেন। পথে বিটিআরআই চৌমোহনায় বিক্ষোভরত শ্রমিকেরা স্থানীয় প্রশাসনের বাঁধার মুখে পড়েন। বাঁধা উপেক্ষা করে মিছিলটি ভাড়াউড়া চা বাগানে যায়। এসময় ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিকেরাও কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে যোগ দেন। এসময় চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি পঙ্কজ কন্দ আন্দোলনরত শ্রমিকদের হাতে নিগৃহীত হন।
এদিকে দুপুরে উপজেলার সাতগাঁও আমরাইলছড়া, গান্ধিছড়া, মকড়িয়াছড়া, ও ইছামতি চা বাগানের শ্রমিকেরা সাতগাঁও চা বাগানসংলগ্ন লছনা বাজারে ঢাকা-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শ্রমিকেরা ‘শেখ হাসিনার সরকার, ৩০০ টাকা দরকার’ শ্লোগান দেন। তিন ঘণ্টা অবরোধের পরে বিকেল ৪টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শ্রীমঙ্গল থানার ওসি’র অনুরোধে অবরোধ তুলে নিয়ে শ্রমিকেরা নিজ নিজ চা বাগানে ফিরে যান।
শ্রমিকদের এই আন্দোলনে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদের সোমবার দেখা যায়নি। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে ভ্যালি কমিটির কয়েকজন নেতা, বাগান পঞ্চায়েত কমিটির নেতা এবং দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শ্রমিক সন্তানেদের আন্দোলনে বাগানের নারী শ্রমিকেরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
এদিকে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতার মোবাইল বন্ধ ছিলো। গণমাধ্যমের কর্মীরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। আর যাঁদের ফোন খোলা ছিলো তাঁরা কল ধরেননি।
এদিকে চলমান চা শ্রমিকদের আন্দোলনের সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান অধিদপ্তর। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বিকেল ৩টায় শ্রম ভবনের সভাকক্ষে প্রশাসনের লোকজন ও চা শ্রমিকদের নিয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
সোমবার শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল কাদের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ঢাকায় এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। এসময় সভায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও চা বাগান শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ তহবিল, ট্রাস্টি বোর্ডের উপ-পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক মো. নাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি, বালিশিরা ভ্যালি কার্যকরী পরিষদের সভাপতি বিজয় হাজরা, সিলেট ভ্যালি কার্যকরী পরিষদের সভাপতি রাজু গোয়ালা, মনু-দলই ভ্যালি কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ধনা বাউরী, লঘরপুর ভ্যালি কার্যকরী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্র গোঁড় ও লংলা ভ্যালি কার্যকরী পরিষদের সভাপতি শহীদুল ইসলামকে যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।