সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এনআরবি সিআইপিদের দুই দিনব্যাপী গ্লোবাল বিজনেস সামিটে দেয়া বক্তৃতায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশে বিনিয়োগের অবারিত সুযোগের ব্যবহার করার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রদান করা হলে তা বাস্তবায়নের আন্তরিক চেষ্টা করা হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে শুরু হওয়া দুইদিন ব্যাপী বিজনেস সামিটে বাংলাদেশ সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী প্রবাসীদের এখনই দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজনেস সামিটে উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ।তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন দেশে বিনিয়োগের যে সুযোগ এখন বিরাজমান তা দ্রুতই কঠিন হয়ে উঠতে পারে। যেসব সুযোগ দেয়া হলে বিনিয়োগ নিশ্চিত হয় , সেসব সুযোগ এরমধ্যেই দেয়া আছে। আরও কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের তা উপস্থাপনের জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ এখন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে। বহু সুচকে বাংলাদেশ এখন পাশের দেশ ভারতকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে কাছে থেকে দেখেছেন। বৈরী সময় অতিক্রম করে দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। এ মহাসড়কে যোগ দেয়ার জন্য তিনি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া অনাবাসী বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
কূটনৈতিক কর্মকর্তাসহ ২০০ টিরও বেশি বিনিয়োগকারী এবং সারা বিশ্বের ব্যবসায়ী নেতারা নিজনেস সামিটে উপস্থিত হয়েছেন। এসময় তারা বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্সের সুযোগ, উদ্ভাবন, ব্র্যান্ডিং, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং অর্থনৈতিক মিরাকেলস নিয়ে আলোচনা করেন।
উদ্বোধনি অনুষ্টানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এনআরবি সিআইপি এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মাহতাবুর রহমান বলেন তাদের আহ্বানে সারা দিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দুবাইয়ে জড় হওয়া উদ্যক্তাদের সমাবেশই প্রমাণ করে বাংলাদেশ নিয়ে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের চরম উৎসাহ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে। বর্তমান সরকারের বিনিয়োগ কর্মসুচীতে প্রবাসীরা আরও যুক্ত হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, আমাদের প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ২৪.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স তারা মহামারি চলাকালীন সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে রেকর্ড উচ্চতায় উন্নীত করতে সাহায্য করেছে।
দেশের বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.২% হবে; ২০২১ কভিড অর্থবছরে বৈদেশিক বাণিজ্য ছিল ৯৭ বিলিয়ন ডলার। প্রতিবছর বাংলাদেশ সরকার শীর্ষ রেমিট্যান্স প্রেরকদের সম্মানীত করে। তাদের মর্যাদাপূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মর্যাদা প্রদান করে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদানের স্বীকৃতি।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ মিলিয়নেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। দেশটি মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত $১.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) তালিকা থেকে ২০২৬ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে আছে।
মন্ত্রী বলেন, সরকারের জনগণপন্থী নীতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি কৌশল ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব আমাদের জনগণ ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। এগুলো আমাদের সাফল্যের রহস্য।
এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমান বলেন, ‘এনআরবিরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদানকারী। শুধু রেমিটারের হিসাবেই নয়, বিনিয়োগকারী এবং বাংলাদেশ পণ্যের আমদানিকারক হিসেবেও (তারা যে দেশে বসবাস করে) তাদের অবদান রয়েছে। এনআরবিরা বাংলাদেশের রপ্তানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করছে। আগামীতেও এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশন দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে বৃহত্তর ভূমিকা পালন করবে।’
সামিটে দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই সামিট বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে দ্বিমুখী বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।
দিলারা আফরোজ খান রূপার পরিচালনায় উদ্বোধনি অনুষ্টানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক শ্যামল দত্ত, আতিকুর রহমান, আজিজ আহমেদ, ইয়াসীন চৌধুরী, মার্কিন স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, গোলাম আলমগির, শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, বি এম জামাল হোসেইন, রাষ্ট্রদুত আবু জাফর, সরকারের বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, কাজী সরোয়ার হাবিব প্রমুখ।
প্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের দেশপ্রেম ও আন্তরিকতায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘দ্বিতীয় গ্লোবাল বিজনেস সামিট দুবাই-২০২১’। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উন্নত অবকাঠামো দেখে বিশ্ববাসী এখন অবাক। পদ্মা সেতুর মতো বিশাল স্থাপনা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন প্রকল্প ও পরিকল্পনা দেখে বিশ্বের অনেকেই বিস্মিত হচ্ছে।
দেশে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেশ কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অর্থাৎ এনজিও/এমএফআই দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে চলেছে, তেমনই বিদেশে অবস্থানকারী এনআরবিগণও ঠিক এ ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশন ও ‘বিজনেস আমেরিকা ম্যাগাজিন’-এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য ‘দ্বিতীয় গ্লোবাল বিজনেস সামিট দুবাই-২০২১’ নিয়ে ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা তো বটেই, প্রবাসী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যেও সাড়া জাগিয়েছে।
দুবাই বিজনেস সামিটে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি লিডিং ম্যাগাজিন ‘বিজনেস আমেরিকা’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই ম্যাগাজিনে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং ব্যবসার চালচিত্র উপস্থাপন করা হচ্ছে।
উত্তর আমেরিকা , দক্ষিণ আমেরিকা , পূর্ব পশ্চিমের নানা দেশ থেকে আসা প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতিতে দুবাই ক্রাউন প্লাজা হোটেল বাংলাদেশীময় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের এমন মিলনমেলাকে দেশের প্রতি প্রবাসীদের আগরকেই তুলে ধরেছে বলে উল্লেখ করছেন সামিটে যোগ দেয়া লোকজন।
নিউইয়র্ক থেকে উদ্যোক্তা , ব্যবসায়ী, বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রবাসী সিআইপি, লেখক এবং প্রবাসের বাংলা সংবাদ মাধ্যমের লোকজনের ব্যাপক সমাবেশ ঘটেছে দুবাই বিজনেস সম্মেলন উপলক্ষে।
প্রথম দিনের অনুষ্টানমালায় বাংলাদেশে বিনিয়োগের সমস্যা , সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নয়ে বেশ কিছু সেমিনার ও আলোচনা অনুষ্টিত হয়েছে।
উদ্বোধনি অনুষ্টানে বিনিয়োগের মাধ্যমে সাফল্য তুলে ধারার জন্য এবং সামিট আয়োজনে উল্লেখযোগ্য অবদান ও পৃষ্টপোষকতা করার জন্য বেশ কিছু প্রবাসীদের সম্মামনা প্রদান করা হয়েছে।