যশোর প্রতিনিধি: যশোর সদর উপজেলা বসুন্দিয়ার জঙ্গলবাঁধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির আংশিক বিরোধিতায় স্থানীয় একটি পক্ষ নানা ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করছে। স্কুলেরই একজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে উচ্চ মহলে অভিযোগ পেশ করে ঐ মহলটি প্রধান শিক্ষক মো: জুলফিকার আলী কে স্কুল থেকে বিতাড়িত করছে উঠেপড়ে লেগেছে।
জানা যায়, ২০২১ সালের ১লা জুলাই প্রধান শিক্ষক পদে মো: জুলফিকার আলী জঙ্গলবাঁধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সম্প্রতি স্কুলের ১০ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ফাতেমা মেধা উর্দ্ধতন মহলে একটি অভিযোগ করেছেন। সেই অভিযোগ পত্রে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন ও দাতা সদস্য শফিকুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা বলেন, যদি ঐ মহলটি প্রধান শিক্ষক ও স্কুলের মান সন্মান নিয়ে টানা হ্যাচড়া করে তবে আমরা রাজপথে নামতে প্রস্তুত আছি। এর শেষ দেখে তবেই মাঠ ছাড়বো।
অভিভাবকদের অনেকেই জানান, ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী ফাতেমা মেধা একজন বিতর্কিত মেয়ে। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় তার ক্লাসেরই হোসাইনের নামেও অভিযোগ করেছিল। সে সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন, এস এম জসিম উদ্দীন। এই ফাতেমা মেধাই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উর্দ্ধতন মহলের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেটি এখন তদন্তের অপেক্ষায়। তবে তদন্ত কার্য্যক্রম বিলম্ব হচ্ছে কেননা অভিযোগকারী শিক্ষার্থী মেধা ও তার মা অসুস্থ। তদন্ত টিম তাদের সাথে কথা বলেছে। তারা মেধা ও তার মায়ের সুস্থতার অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পত্র পত্রিকায় যা লেখা হচ্ছে তাতে এই ঐতিহ্যবাহী পুরাতন স্কুলটি ও এরসাথে সম্পৃক্তদের মান সন্মান বিনষ্ট হচ্ছে।
জঙ্গলবাঁধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: জুলফিকার আলী বলেন, এর আগে আমি ২০০১ সালে শিক্ষকতার হাতে খড়ি আকিজ কলেজিয়েট স্কুলে। এরপর নাভারনের বুরুজবাগান পাইলট গার্লস স্কুল ও বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। সে সময় কখনো এমন অভিযোগ ওঠেনি। একটি মহল কল্পিত অভিযোগ উত্থাপন করে আমাকে এখান থেকে সরাতে চাইছে। ম্যানেজিং কমিটির দুইজন প্রকাশ্যেই ঐ মেয়ের পক্ষ নিয়ে সমর্থন করে স্বাক্ষর করেছে। তারা প্রকাশ্যেই আমার বিরোধিতা করছে। তবে কি কারনে তাদের এই বিরোধিতা তা আমার বোধগম্য নয়।
জঙ্গলবাঁধাল মাধ্যমিক স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, প্রধান শিক্ষকের নামে এর আগে কখনো কোন অভিযোগ পায়নি। তাছাড়া লোকাল পর্যায়ে মীমাংষার মত একটি বিষয় যখন উর্দ্ধতন মহলের কাছে লিখিত অভিযোগ পেশ করা হয় তাতে ম্যানেজিং কমিটির কার্যত কিছুই করার থাকেনা। এখন আমরা ঐ তদন্তের অপেক্ষায় আছি।
তবে স্কুলের সদস্য সচিব জুলফিকার আলী বলে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দ্যেশে প্রণোদিত। একটি কুচক্রি মহল বিশেষ উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য স্কুলের একজন অভিভাবক দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেন যা ষড়যন্ত্রমূলক।
ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য ইসা আলমগীর বলেন, এসব সমস্যার সমাধান না হলে স্কুলের পড়াশুনার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
স্কুলের সাবেক ছাত্র শহিদুল হক বলেন, আমার মেয়ে এই স্কুলের ছাত্রী। আমিও এই গ্রামের বাসিন্দা। পড়েছিও এই স্কুলে এ কারনে আমাদের দাবি যথেষ্ট। আমরা চায় স্কুলে পড়াশুনার সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরে আসুক। সকলকে মনে রাখতে হবে ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান বড়। তাছাড়া এক্ষেত্রে অভিযোগকারীকেই অভিযোগ প্রমান করতে হবে। এই দায়িত্ব অন্য কারো নয়।
একজন অভিভাবক জহুরুল ইসলাম বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লেখাপড়া নষ্ট হচ্ছে। অথচ স্কুলটির বয়স আমার বা আমার পিতার বয়সের থেকেও বেশি। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ আমলে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত।
স্কুলের সাবেক ছাত্র শরিফুল ইসলাম লিটন বলেন, মানুষ মাত্রই ত্রুটি বিচ্যুতি হতে পারে। আমরা সেটি আমলে এনে স্কুলে পড়ার পরিবেশ ফিরে পেতে চায়।
ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য নাজিম উদ্দীন ও দাতা সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে মীমাংষার জন্য ম্যানেজিং কমিটিকে বার বার বললেও তাতে কাজ হয়নি।