
দেশে ফিরেই দায়ী রিক্রুটিং এজেন্সি, দালালদের বিচারের দাবি করে আসছিলেন ভিয়েতনাম গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ফেরা ১০৬ জন প্রবাসী কর্মী। কিন্তু দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো এই প্রবাসী কর্মীদেরই আটক করেছে পুলিশ। গত ১৮ আগস্ট দেশে ফেরার পর তারা দিয়াবাড়িতে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার দিকে তাদের নিয়ে যেতে পুলিশভ্যান আনা হয় কোয়ারেন্টিন ক্যাম্পে। ১০৬ জনের সবাইকে আটক করা হচ্ছে কিনা, কী কারণে আটক করা হচ্ছে এসব বিষয়ে নিশ্চিত করেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল মোত্তাকীন জানান, তাদের কোর্টে তোলা হবে। কোন মামলায় ও কতজনকে আটক দেখানো হচ্ছে তা নিশ্চিত করে জানাননি তিনি।
গত কয়েকদিন ধরেই ভিয়েতনাম ফেরতদের নিয়ে লুকোচুরি করেছে পুলিশ। রবিবার রাত থেকে তুরাগ থানা পুলিশ তাদের নাম, ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছে। মামলার জব্দ তালিকার মতো করে তাদের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্রের তালিকাও করেছে পুলিশ। তুরাগ থানার উপ-পরিদর্শক মো. আনোয়ারুল ইসলাম সেখানে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করলেও পরিষ্কার করে জানানো হয়নি, কেন এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে তাদের কাউকে কাউকে আটকের কথা বলেছেন তুরাগ থানার উপ-পরিদর্শক মো. আনোয়ারুল ইসলাম। রবিবার রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘আমি শুধু ঊর্ধ্বতনের নির্দেশে তাদের (ভিয়েতনাম ফেরত) তালিকা করেছি। তবে তাদের কী করা হবে, সে বিষয়ে আমি জানি না।’ মঙ্গলবার সকালে ফোন করলে মো. আনোয়ারুল ইসলাম কল রিসিভ করেননি।
ভাগ্য বদলানোর আশা নিয়ে গেলেও তাদের ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে। কেউ কেউ শিকার হয়েছেন নির্যাতনের। এখন ভিয়েতনামে যারা আছেন তারাও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভিয়েতনামে মানব ও অর্থপাচারে জড়িত ২১ প্রতিষ্ঠান। প্রতি মাসে ৫০০ ডলারের বেশি আয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ভিয়েতনামে। কর্মসংস্থানের আশায় গিয়ে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে ছয়-সাত মাস পরেই ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন ভুক্তভোগী প্রবাসীরা। কেউ কেউ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মানবপাচারকারী চক্র অর্থপাচারের কাজেও জোরপূর্বক ব্যবহার করছেন প্রবাসীদের।
জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র নেওয়া ৯ রিক্রুটিং এজেন্সি
নয়টি রিক্রুটিং এজেন্সি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে ভিয়েতনামে কর্মী পাঠানোর ছাড়পত্র নিয়েছে। তাদের হয়েই কাজ করে দালাল চক্র। ভিয়েতনাম যেতে নেওয়া হয় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। এজেন্সিগুলো হচ্ছে:
মেসার্স এ ঝর্ণা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (আরএল ১৭২৬), মেসার্স সন্ধানী ওভারসীস লিমিটেড (আরএল ৪১৬), মেসার্স মাম অ্যান্ড ম্যাম ওভারসীস (আরএল ১২১৭), মেসার্স মুন এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (আরএল ৫৯৩), মেসার্স ইস্তেমা ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (আরএল ১২৫১), মেসার্স আফিফ ইন্টারন্যাশনাল (আরএল ১৭২১), মেসার্স এসকে গ্লোবাল ওভারসীস (আরএল ১৪৪৭), মেসার্স রেজওয়ান ওভারসীস (১৩৬০), মেসার্স হোলি ওভারসীস লিমিটেড (আরএল ৭৫০)।
কর্মী সংগ্রহ ও অর্থ লেনদেনে জড়িত ১২ প্রতিষ্ঠান
জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র নেওয়া নয় রিক্রুটিং এজেন্সি থাকলেও তাদের সহায়তায় জড়িত আরও ১২টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান দালালদের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে:
পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল (আরএল ১৩৩৪), স্টার লাইন অ্যাসোসিয়েট (আরএল ৭৭৬), মেসার্স দ্যা জে কে ওভারসীস লিমিটেড (আরএল ১৫৯১), আল নোমান হিউম্যান রিসোর্স, মেসার্স সাতক্ষীরা ইন্টারন্যাশনাল (আরএল ৯৯৭), ম্যাশ কেরিয়ার সার্ভিসেস, অ্যাডভ্যান্ট ওভারসিস লিমিটেড (আরএল ১৫১৪), এম আক্তার অ্যান্ড সন্স (আরএল ১২৮৪), মেসার্স হাইওয়ে ইন্টারন্যাশনাল (আরএল ২৭), মেসার্স অলিম্পিক ট্রেইলক (বিডি) লিমিটেড, কাজি এন্টারপ্রাইজ, রেঞ্জার ইন্টারন্যাশনাল।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন