বাংলা এক্সপ্রেস ডেস্কঃ করোনাজনিত অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে সরকার শর্ত সাপেক্ষে গার্মেন্টসহ রফতানি খাতের জন্য প্রণোদনা হিসেবে ৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণের ঘোষণা দিয়েছে। শর্তটি হচ্ছে, কারখানার মালিকরা এ টাকা পাবেন দুই শতাংশ হারে সুদে ঋণ হিসেবে এবং তা দিয়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে হবে।
উদ্বেগজনক হল, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজের অর্থ এখন পর্যন্ত কোনো গার্মেন্ট মালিক বা শ্রমিক পাননি। ইতোমধ্যে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পার হয়েছে। উল্লেখ্য, কমপ্লায়েন্স প্রতিপালনের শর্ত হিসেবে মাসের সাত কার্যদিবসের মধ্যে আগের মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার কথা।
এ অবস্থায় শ্রমিক-কর্মচারীদের সময়মতো বেতন-ভাতা দেয়া নিয়ে যেমন দুশ্চিন্তা রয়েছে বেশিরভাগ শিল্প মালিকদের, তেমনি সাব-কন্ট্রাক্টে থাকা অন্তত ৪ হাজার কারখানার জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, এসব কারখানা বিজিএমইএর সদস্য নয় বিধায় ঋণ প্যাকেজ থেকে এখানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ অবস্থায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঈদের আগে বেতন-ভাতার দাবিতে শ্রমিকদের চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ উসকে দিয়ে তাদের রাস্তায় নামানো হতে পারে। এমন শঙ্কার কথা সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।
দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অংশীজন হিসেবে শ্রমিক শ্রেণি কর্তৃক বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড- অবরোধ, ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদি যেমন সমর্থনযোগ্য নয়, তেমনি যথাসময়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিও প্রণিধানযোগ্য। মনে রাখা দরকার, মালিক ও শ্রমিক একই বাইসাইকেলের দুটো চাকার মতো। একটি না থাকলে আরেকটি চলবে না।
কাজেই উভয়ের স্বার্থরক্ষায় উভয় পক্ষকেই আন্তরিক হতে হবে। গার্মেন্ট শিল্পের বিকাশ ও সুরক্ষায় মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের যৌক্তিকতা নিয়ে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। দেশের মোট রফতানি আয়ের অন্যূন ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ খাতে কর্মরত শ্রমিকরা অনেক সময়ই মালিকপক্ষের খামখেয়ালিপনার শিকার হয়ে দুঃসহ অবস্থার মধ্যে নিপতিত হয়।
দেখা গেছে, অনেক মালিকই শ্রমিকদের প্রাপ্য বেতন ও বোনাস দিতে গড়িমসি করে, যা দুঃখজনক। করোনাভাইরাস সংকটে শ্রমিকদের বেতন দিতে সরকার যে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল করেছে, সেখান থেকে ঋণ পেতে যারা আবেদন করেছেন; সেসব আবেদনের বিপরীতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হিসাবে ২ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এখন এসব অর্থ শ্রমিক-কর্মচারীদের হিসাবে দ্রুত ছাড় করার উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
দেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটলে তা তৈরি পোশাক শিল্প খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ অবস্থায় যে কোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড এ শিল্পের ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।
এমনিতেই আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। এ অবস্থায় আমাদের এমন কোনো আচরণ করা উচিত নয়, যাতে ষড়যন্ত্রকারীরা তা থেকে ফায়দা লুটতে পারে। ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করতে দেশের পোশাক খাতের তিন সংগঠন- বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমইএসহ সরকার ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর একযোগে কাজ করা উচিত।