অন্যরকম এক প্রেসিডেন্টের যাত্রা শুরু হলো লাতিন দেশ পেরুতে। বেতন নেবেন স্কুল শিক্ষকের, থাকবেন না বিলাসবহুল প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে।
বুধবার (২৮ জুলাই) কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করেন ৫১ বছর বয়সী ক্যাস্তিলো। ক্যাস্তিলোর সারাটা জীবনই কেটেছে সাধারণ বেশভূষায়। জন্ম দরিদ্র কৃষক পরিবারে, ২৫ বছর ছিলেন গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। স্বল্প আয়ের সংসারে ঘরের কাজ করতে হয়েছে নিজেকেই। মাঠে গরু চড়িয়েছেন, হাল চাষও করেছেন ফসলের খেতে।
ক্লাসরুম কিংবা ফসলের খেত থেকে লাতিন আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ক্যাস্তিলোর গল্প রূপকথাকেও হার মানাবে। শিক্ষকদের ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনায় আসেন এই ইউনিয়ন নেতা। কিন্তু কখনো জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন না করে সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতবেন, ভাবনায়ও ছিলো না অনেকের।
আধুনিক সময়ে ক্যাস্তিলোই পেরুর প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান রাজধানীতে যার বাড়ি নেই। বুধবার কংগ্রেসে শপথগ্রহণের পর, তিনি ঘোষণা করেন,
রাজধানী লিমার বিলাসবহুল প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে থাকবেন না। পাঁচশ’ বছর ধরে ক্ষমতার কেন্দ্র ওই ভবনটিকে বানাবেন জাদুঘর।
পেরুর নতুন প্রেসিডেন্ট পেদ্রো ক্যাস্তিলো বলেন, আমি পেরুর এমন অংশ থেকে এসেছি যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী নিপীড়িত ও বঞ্চিত হয়েছে। একজন গ্রাম্য শিক্ষক এখানে ধনী হতে আসেননি। আমি হাউজ অব পিজারোতে (প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ) থাকবো না। ঔপনিবেশিক এসব প্রতীকের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে না পারলে প্রকৃত মুক্তি আসবে না।
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষই পরিবর্তনের রায় দিয়েছে। যারা বৈধভাবে সম্পদ অর্জন করছে, তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু যারা ঘুষ দিয়ে, অবৈধ উপায়ে একচেটিয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছে, তাদের লাগাম টানার সময় এসেছে। পেরুর মতো ধনী দেশে সামাজিক বিভক্তি থাকতে পারে না।
খনিজ সম্পদে ভরপুর পেরু বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তামা উৎপাদক দেশ। এরপরও দারিদ্র আর বেকারত্ব পিছু ছাড়ছে না সাড়ে তিন কোটি মানুষের দেশটির। অভিষেক বক্তব্যে খনির কর বাড়ানোসহ অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তনের ঘোষণা দেন মার্ক্সিস্ট পার্টি নেতা ক্যাস্তিলো।
ক্যাস্তিলোর এই ঘোষণায় বেশি অস্বস্তিতে পেরুর রাজনীতি ও ব্যবসা খাতের এলিটরা। এরইমধ্যে তাকে কট্টর বামপন্থি তকমা দিয়েছে বিরোধীরা।
অবশ্য ক্যাস্তিলো বলছেন, প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে স্ত্রী লিলিয়া পারেদিসকে নিয়ে গ্রামেই ফিরে যাবেন। তাই শহুরে ধনীদের ভয়ে কাবু হবেন না। জানিয়েছেন, স্কুল শিক্ষক হিসেবে যতো বেতন পেতেন প্রেসিডেন্ট হিসেবেও ততটুকুই নেবেন।