পূর্ব শত্রুতার জের ধরে নরসিংদীর শিবপুরে চার একর জায়গায় গড়ে ওঠা একটি পুকুরে গভীর রাতে কীটনাশক (বিষ) প্রয়োগ করে কোটি টাকার মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাদিম সরকার, তার ভাই শামীম সরকার ও শাহিন সরকারের পুকুরে এ কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়।
পুকুর মালিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জয়নগর ইউনিয়নের নৌকাঘাটা এলাকার শাহিন সরকার, শামিম সরকার ও তার ছোট ভাই ইউপি চেয়ারম্যান নাদিম সরকার প্রায় ৫০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে এই পুকুরে মাছের পোনা ছাড়েন। শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পুকুরের পূর্ব পাশে মেইন রাস্তায় একটি সাদা প্রাইভেটকার দেখতে পান সেখানে দায়িত্বে থাকা দুই কেয়ারটেকার তাজুল ও শওকত। পরে শনিবার সকালে পুকুরে শত শত মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। পুকুরের পাশ থেকে দুটি বিষাক্ত কেমিক্যালের বোতলও পাওয়া যায়। গভীর রাতে দুষ্কৃতকারীরা পুকুরে বিষাক্ত কেমিক্যাল বা কীটনাশক প্রয়োগ করেছে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুকুরের কেয়ারটেকার তাজুল ও শওকত বলেন, প্রতিদিনের মতো রাতে আমরা টহল দিচ্ছিলাম। রাত ২টার একটু পর আমরা পুকুরের পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে পূর্ব পাশের রাস্তায় একটি সাদা প্রাইভেটকার দেখি। এটাকে সন্দেহ না করে পাশেই অন্য পুকুরের দিকে চলে যাই। পরে সকালে এসে ওই পুকুরে শত শত মরা মাছ ভাসমান অবস্থায় দেখি। পুকুর মালিক শাহিন সরকার বলেন, আমরা তিন ভাই মিলে শুধু এই পুকুরের জন্যই প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে চালান শুরু করি। শিং, তেলাপিয়া ও বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছের পোনা ছাড়া হয় ৪৮ লাখ টাকার। এখন পর্যন্ত একটি মাছও ওঠাতে পারিনি। এটা প্রথম চালান ছিল। সকালে মরা মাছই তুলেছি প্রায় চল্লিশ মণ। পুকুরটা অনেক বড় এবং খুব সচেতনভাবে মাছ চাষের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।
তার মেজো ভাই শামীম সরকার জানান, মাছগুলো বিক্রির সময় হয়ে এসেছে। আশা করছিলাম সব মিলিয়ে এক কোটি টাকার মাছ বিক্রি করতে পারবো। সকালে আমরা এত মরা মাছ দেখে নিজেদের সামলাতে পারছি না। মানুষ কীভাবে এমন কাজ করতে পারে। আমার ছোট ভাই বর্তমানে চেয়ারম্যান, সামনে আবার নির্বাচন। রাজনীতি করলে কিছু শত্রু থাকে। তাছাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের ঝামেলা চলছিল। আমরা এখন নিরাপত্তহীনতায় ভুগছি। আমরা এই ঘটনায় থানায় মামলা করব। স্থানীয় ইউপি সদস্য (৭ নং ওয়ার্ড) মো. শাহিন মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। দেখলাম পানির ওপরে তেলের মতো কিছু একটা ভেসে আছে। আবার দুইটা বিষের বোতলও পাওয়া গেছে। রাতের আঁধারে পুকুরে কেউ কীটনাশক জাতীয় কিছু প্রয়োগ করেছে বলে ধারণা করছি।
এ বিষয়ে শিবপুর মডেল থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।