যশোরে পুলিশের নির্যাতনে ইমরান হোসেন (২২) নামে এক কলেজ ছাত্রের দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর অবস্থায় তিনি যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। আর পুলিশ বলছে, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশের কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্যাতনের শিকার ইমরান হোসেন যশোর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর গ্রামের নিকার আলীর ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে ইমরান দুই নম্বর। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
আহত ইমরান বলেন, ‘গত বুধবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় আমি সলুয়া বাজার এলাকা থেকে নিজ বাড়ি ফিরছিলাম। ওই সময় আমার সঙ্গে আরেকজন ছেলে ছিল। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সাজিয়ালি ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা আমাদের গতি রোধ করেন। ব্যাগ তল্লাশি শুরু করেন। ভয়ে আমি দৌড় দিলে পুলিশ ধাওয়া করে ধরে ফেলে এবং বেধড়ক মারপিট করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে জ্ঞান ফিরলে নিজেকে একটি ফার্মেসিতে দেখতে পাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পকেটে গাঁজা দিয়ে আমাকে আটকের কথা বলে বাবাকে ফোন দিয়ে ২৫ হাজার টাকা দাবি করে পুলিশ। পরে ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
ইমরান বলেন, ‘মারপিটের ঘটনা কাউকে জানালে পুলিশ আমাকে রিমান্ডে নিয়ে ফের মারপিট করবে বলে হুঁমকি দেয়। তাই ভয়ে আমি এতদিন কাউকে কিছু বলিনি। তিন দিন ধরে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা; সহ্য করতে না পেরে শেষে মা-বাবাকে জানাই। এরপর আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ব্যথায় ছটফট করি। কোনও ওষুধই শান্ত করতে পারে না।’
ইমরানের মা বুলবুল বেগম বলেন, ‘পুলিশের নির্যাতনে আমার ছেলের দু’টি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। বাঁচবে কি-না জানি না।’ এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ইমরানের বাবা নিকার আলী বলেন, ‘ছেলেটা লেখাপাড়া করে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন, কোনও খারাপ কাজের সঙ্গে সে জড়িত কিনা। অথচ তাকে ধরে নিয়ে এভাবে নির্যাতন করা হলো। আমি এর বিচার চাই।’
ইমরানের চিকিৎসক যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. উবায়দুল কাদির উজ্জ্বল বলেন, ‘তার দু’টি কিডনির ফাংশন খুবই খারাপ। স্বাভাবিক অবস্থায় কিডনির ক্রিয়েটিনিন এক দশমিক ৪ এর মধ্যে থাকার কথা, কিন্তু ইমরানের তা ৮ দশমিক ৮। আজ এটা আরও বেড়েছে। দ্রুত ডায়ালাইসিস শুরু করতে হবে। আজই সেটা করা হবে। তবে সে রিকভারি করবে কিনা বলা যাচ্ছে না। অবস্থা শঙ্কটাপন্ন।’
এ বিষয়ে সাজিয়ালি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মুন্সি আনিচুর রহমান জানান, ঘটনার দিন সকালে তিনি জরুরি কাজে কোতোয়ালি থানায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পে ফেরেন। এসে জানতে পারেন এএসআই সুমারেশ সাহা ও সাজদার রহমানসহ চার জন কনস্টেবল ওই কলেজছাত্রকে আটক করেছেন। কিন্তু সে অসুস্থ হওয়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাকে ছাড়তে কোনও টাকা পয়সার লেনদেন হয়নি বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ আশরাফ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি গুরুত্ব দিয়ে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করতে বলেছি। ওই ছেলে অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কি না তারও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশের কেউ এ নির্যাতনে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’