মো. রাসেল ইসলাম: যশোরের শার্শায় গত দুই দিনের মাঝারি বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় উত্তরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকার শত শত বিঘার বোরো ধান নিয়ে দুষ্চিন্তাই পড়েছেন কৃষকরা। ক্ষেতে কেটে রাখা পাকা ধানের সাথে কৃষকের স্বপ্ন বৃষ্টির পানিতে ভাসছে।
ফলন ভালো হলেও আবহাওয়া পরিস্থিতি ও শ্রমিক সংকটের কারণে সময়মতো ঘরে তুলতে না পেরে বিপাকে পড়েন তারা।
ঈদের আগে থেকে কিছু কিছু এলাকায় ধান কাটা শুরু হলেও কৃষকরা ধান বাড়িতে না এনে জমিতেই রেখে দেন। ঈদ চলে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কৃষকদের ক্ষেতে কেটে রাখা পাকা ধান বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। অনেকের দাঁড়িয়ে থাকা পাকা ধানগাছ বাতাসে হেলে পড়েছে। ফলে কাটা এবং গুছিয়ে ঘরে তোলাসহ ধান শুকানো নিয়ে কৃষকরা পড়েছেন বেকায়দায়।
বৃষ্টির একটু বিরতিতে নতুন করে কিছু কৃষক ফসল গোছাতে ব্যস্ত হলেও অনেকের পাকা ধানগাছ শ্রমিক সংকটে মাঠেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও শনিবারে দু দফায় মাঝামাঝি ধরনের ঝোড়ো বৃষ্টি শুরু হয়। এতে অনেক খেতেই পানি জমে গেছে।
শার্শার উত্তারঞ্চলের ডিহি গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন বলেন, প্রখর রোদে রোজা রেখে ধান কাটতে পারিনি। এ সময় ধান তেমন পাকেনি। তাই ঈদের দুই দিন পরে ধান কাটা শুরু করি। ধান ঘরে তোলার আগেই বৃষ্টিতে আমার ধানের জমিতে কাটা ধান ভাসছে।
কাশিপুর গ্রামের সিফাত আলী বলেন, তিন বিঘার মধ্যে এক বিঘা জমির ধান বাড়িতে আনতে পেরেছি। বাকি দুই বিঘার ধান কেটে জমিতে ফেলে রাখায় বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। এতে আমার বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে। আমার চারটা গরু আছে। ধান বাড়িতে আনতে না পারলে বিচালির অভাবে আমার গরুগুলো না খেয়ে মারা যাবে।
প্রতিবছর দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা শ্রমিকরা কৃষকের ধান কেটে দিলেও এবার তাদের সংখ্যা ছিল কম। ফলে অনেক কৃষক শ্রমিক জোগাড় করতে পারেননি। শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি খারাপ আবহাওয়া কৃষকদের ধান কাটা পরিস্থিতিকে বিপাকে ফেলেছে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ মণ্ডল বলেন, আবহাওয়া পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হলেও দুই দিনের বৃষ্টিতে ধানের তেমন সমস্যা হবে না। তবে বৃষ্টির আগে যারা ধান ঘরে তুলতে পারেননি তাদের ধানের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব মাঠ থেকে পানি অপসারণ করে ধান সংগ্রহ করে বাড়িতে আনার তাগিদ দেন তিনি।
চলতি মৌসুমে শার্শায় ২৩ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি অফিসের মতে, গত শনিবারে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১০ মিলি লিটার। এ পর্যন্ত ৬০% শতাংশ বরো ধান ঘরে উঠেছে। দ্রুত যেন বাকী ধান গুলো ঘরে তোলা যায় সে বিষয়ে কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।