নৌপথ দুর্ঘটনার জন্য নৌপুলিশ ৬০% দায়ি বলে মন্তব্য করেছেন সেভ দ্য রোড-এর নেতৃবৃন্দ। ২১ মার্চ সকাল ৯ টায় আকাশ-সড়ক-রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত রাখার লক্ষ্যে একমাত্র স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জের সৈয়দপুর কয়লা ঘাট এলাকা পরিদর্শন শেষে দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া লঞ্চে থাকা নিখোঁজদের স্বজন ও গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তারা এ কথা বলেন।
সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা এসময় আরো বলেন, নৌ পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার কারণে নারায়ণগঞ্জে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলছে। দুর্ঘটনার পর তারা এসে গণমাধ্যমের সামনে বিভিন্ন কথা বলেন, কিন্তু তাদের দায়িত্ব কি এ পর্যন্তই শেষ! নৌ যানের রুট পারমিট পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চলাচলের শৃংখলা বজায় রাখা, নৌপথে যাত্রীদের অধিকার রক্ষাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে তাদের চরম অনীহার কারণে নৌপথে ক্রমশ দুর্ঘটনা বেড়ে চলছে। এমনকি দুর্ঘটনার এলাকাটি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, নৌপুলিশের এটি টিমও কাছাকাছি কোথাও অবস্থান করছিলো না। দুর্ঘটনার ১ ঘন্টা পরও তারা এসে পৌছাতে পারেনি বলেও স্থানিয়রা আমাদেরকে জানিয়েছেন। নৌপুলিশ যদি দুর্ঘটনা কমাতে কোন ভূমিকাই না রাখেম কেবল ঘাট ইজারা তদারকি, মাছ খাওয়া আর জনতার রক্ত পানি করা অর্থে বেতন নেয়ার জন্য কি খুব বেশি প্রয়োজন? তা যদি না হয়, তাহলে অবশ্যই নৌপুলিশকে হতে হবে আরো দায়িত্বশীল। একই সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তর-উপদপ্তরে কেবল লিজ, বালু মহল, টেন্ডারবাজী চললেও নৌপথকে দুর্ঘটনামুক্ত রাখার কোন উদ্যেগ বা প্রয়াস না থাকাও এমন নির্মম দুর্ঘটনার জন্য দায়ি। এসময় সেভ দ্য রোডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মোমিন মেহেদী, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায় প্রমুখ গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে আরো বলেন, প্রায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে এমভি রুপসীর ধাক্কায় নিমজ্জিত লঞ্চটির সকল যাত্রীকে উদ্ধারেও তৎপরতা দেখছি না তেমন একটা। আমরা দ্রুত নিখোঁজদের উদ্ধার এবং নিহতদের পরিবারকে কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি এবং ঘাতক এমভি রুপসির সকল স্টাফের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
গত ১৪ বছর ধরে ৪ পথ দুর্ঘটনামুক্ত রাখতে গবেষণা-সচেতনতা তৈরি এবং রাজপথে গণমূখি কর্মসূচি ভিত্তিক পথচলায় আমরা বারবার যে ৭ দফা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, সেই ৭ দফা বাস্তবায়ন হলেই ৪ পথই দুর্ঘটনামুক্ত হবে বলে আমরা বিশ^াস করি। সেই ৭ দফা হলো- ১. বঙ্গবন্ধু ফুটবল লীগের খেলা শেষে বাড়ি ফেরার পথে সড়কপথ দুর্ঘটনায় নিহত অর্ধশত শিশু-কিশোর-এর স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে সচেতনতা তৈরিতে রাষ্ট্রিয় ভূমিকা পালন। ২. ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে। ৩. সড়কপথ পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেস বিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক-সহযোগি নিয়োগ বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৪. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দুর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ সরকারীভাবে দিতে হবে। ৫. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. পথ দুর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ সহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ৭. ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতু সহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে নতুন করে কাউকে প্রাণ দিতে না হয়।